এক বছরে কাস্টমসে খরচ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ
কাস্টমস ও বন্ড সংক্রান্ত জটিলতা-হয়রানির কারণে এক বছরে রপ্তানিমুখী শিল্পে খরচ বেড়েছে গড়ে ৪৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। একই সময়ে কারখানাগুলো অর্ডারের অভাবে সক্ষমতার তুলনায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম উৎপাদন করেছে, অন্যদিকে কমেছে পোশাকের জাহাজীকরণ মূল্য (এফওবি)। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে সক্ষমতার তুলনায় অর্ডার কম রয়েছে ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে ফোরাম প্যানেল আয়োজিত মতবিনিমিয় সভায় জরিপ ফল প্রকাশ করা হয়। ডিসেম্বরে রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৬৬ কারখানা মালিকের মতামতের ভিত্তিতে জরিপের ফল তৈরি করা হয়।
ফোরাম হচ্ছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এক অংশ, যারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিল্পের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করছে। এবার ফোরামের প্যানেল লিডারের দায়িত্বে রয়েছেন বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালক ফয়সাল সামাদ।
জরিপের তথ্যমতে, ৭৯ শতাংশ কারখানা মালিক জানিয়েছেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হলেও বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। যদিও একই ক্রেতা ভারত ও চীন থেকে একই পণ্যের ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিচ্ছেন। মূলত পোশাক সংক্রান্ত কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবে বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সব ধরনের কারখানায় ভোগান্তি বেড়েছে।
কাস্টমসের হয়রানির চিত্র তুলে ধরে এক গার্মেন্ট মালিক বলেন, ফ্রান্সের ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী উলের (এক ধরনের তন্তু) সুতা এনে রেডিমেড গার্মেন্ট রপ্তানির জন্য বন্দরে পাঠানো হয়। পোশাকের কেয়ার লেভেল ফ্রান্সের ভাষায় লেখা থাকায় উল শব্দটি কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি। আর এ কারণে কয়েক দিন অফডকে পণ্য ফেলে রাখা হয়। পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়।
ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, পোশাক শিল্পের প্রকৃত অবস্থা তুলে আনতে এ ধরনের আরও জরিপ করা উচিত। যেমন করোনার সময় অর্ডার বাতিলের তথ্য দিতে বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে কারখানা মালিকদের অনুরোধ জানানো হয়, প্রথমে মালিকরা তথ্য দিতে সংকোচ বোধ করলেও পরে সবাই তথ্য দেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পরে সরকার ও বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়। সরকারের তরফ থেকেই ১৪টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা তখন শিল্পের জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্প এখন অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হয়তো আমরা স্বীকার করছি না। কিন্তু এখন স্বীকার করার সময় এসেছে। রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে তা আদৌ কতটুকু বাস্তবসম্মত সেটা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের গরমিলে বোঝা যেতে পারে। অন্যদিকে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলে কারখানায় দায় কীভাবে বাড়ে, ওভারটাইম বন্ধ থাকে কীভাবে বা উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী মালিকরা পূর্ণাঙ্গরূপে কারখানা চালাতে পারছেন না কেন?
ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, পোশাক শিল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট আন্তরিক। তার সহযোগিতা ও সমর্থনে শিল্প আজ বিশ্ববাজারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শিল্পের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক তথ্য দিতে হবে, যাতে তিনি সঠিক পলিসি নির্ধারণ করতে পারেন।