ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকেঃ পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজির ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালক নিহত এবং ৫ যাত্রী গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে পাবনা-পাকশী আঞ্চলিক সড়কের ঈশ্বরদীর সাহাপুর মসজিদ মোড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুর আড়াইটায় মৃত্যবরণ করে। নিহত সিএনজি চালক মোঃ শরীফ ( ৪০) ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার জামাল মিয়ার ছেলে।
গুরুতর আহতরা হলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের জল্লাদখালিপাড়ার মজিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মাদ মিল্টন, ঈশ্বরদীর মহাদেবপুর গ্রামের সোহরাব প্রামানিকের ছেলে শরীফ প্রামানিক, পাবনার দাপুনিয়ার আজাহার প্রামানিকের ছেলে উজির হোসেন, প্রাইভেটকারের যাত্রী পাবনা সদর থানার বাগচিপাড়ার আব্দুল মান্নানের মেয়ে আখি খাতুন ও কামালপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক ফকিরের ছেলে মোঃ সুমন। দুর্ঘটনাস্থলে থেকে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা আহতের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে ৩ যাত্রীর অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এদিকে স্বজন না থাকায় নিজের খরচে আহত মোহাম্মদ মিল্টন মোল্লা (২৭) নামের একজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। থানা ও ফায়ার সার্ভিস সুত্র জানায়, ঘটনার সময় পাকশীর রূপপুর থেকে ৬ যাত্রী নিয়ে আওতাপাড়ায় যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে একটি ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের মাঝে চলে আসে। এই সময় আওতাপাড়া থেকে রূপপুরের দিকে আসা প্রাইভেটকারের সঙ্গে সিএনজিরটি মুখোমুখি সংঘর্ষ লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. নিশাত হাসনা আনজুম জানান, আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে একজনের কোন অভিভাবক না থাকায় নিজের খরচে রামেক প্রেরণ করে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন ওসি। গুরুতর আহত মোহাম্মাদ মিল্টন মোল্লার মা শেফালী বেগম জানান, ঘটনার সময় ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমাদের পরিবারের কেউ ছিল না। কিন্তু আমার ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। থানার ওসি সাহেব যদি দয়া করে আমার ছেলেকে রাজশাহী হাসপাতালে এম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে না পাঠাতেন তাহলে আমার ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। যদিও আমার ছেলের অবস্থা এখনও ভাল না। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার খবর শুনে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অভিভাবকহীন এক রোগিকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক-এ প্রেরণের ব্যবস্থা করে ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছেন। এর আগেও বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণে সবাই বর্তমান ওসি রফিকুল ইসলামকে মানবিক ওসি হিসেবে মনে করছেন। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে। আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে গুরুতর আহত অভিভাবকহীন রোগিকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। পুলিশরা সব সময়ই ভাল কাজের সঙ্গে থাকে। অসহায় ও বিপদগ্রস্থদের সহযোগিতা করে। আমিও তাই করেছি।