today visitors: 5073432

লেখাপড়া ও ভালো রেজাল্ট 

 

মোমেন আকন্দ (স্পেশাল রিপোর্টার)

পৃথিবীতে সব ছাত্রছাত্রী ই একটি কমন ইচ্ছা থাকে। সেটি হলো ভালো রেজাল্ট। ভালো রেজাল্ট করার জন্য বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা যতটুকু না আগ্রহ প্রকাশ করে, বেশিরভাগ স্টুডেন্ট ই ভালো রেজাল্টের জন্য পরিশ্রম করতে রাজি নয়। পরিশ্রম ছাড়া কখনো সফলতা সম্ভব নয় সেটি আমরা ভুলে যাই। আজকে আমি লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার জন্য কয়েকটি ছোট ছোট টিপস শেয়ার করব।

 

১)লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবেঃ কথায় আছে লক্ষহীন ব্যক্তি মাঝেহীন নৌকার মতো। আমরা কি করতে চাই, কি হতে চাই, কতটা ভালো রেজাল্ট করতে চাই, এইসবই নির্ভর করে আমাদের লক্ষ্যের উপর। যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা চিন্তা করি, আজকে সকালে দুই কিলোমিটার হাটবো, তাহলে দুই কিলোমিটার না হলেও অন্তত দেড় কিলোমিটার আমরা হেঁটে ফেলব। আর যদি এমনটা চিন্তা করি যে বের হলাম, একটু হেঁটে চলে আসব, তাহলে হয়তো ৫০০ মিটারও হাটা হবে না। এর কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের লক্ষ্যটা নির্ধারণ করে হাঁটতে বের হয়নি। ঠিক তেমনি, লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য নির্ধারণ করা না থাকলে ভালো রেজাল্ট করা এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার। তাই ভালো রেজাল্ট করার জন্য একটি সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য সেই অনুযায়ী লেখাপড়া করে প্রস্তুত হতে হবে।

 

২) প্ল্যান তৈরি করা : কোন ব্যাপারে সফল হতে হলে আমাদের একটি সময় সাপেক্ষ প্লান থাকা প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকেই জানি, প্ল্যান ছাড়া কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও একটি প্ল্যান থাকা আবশ্যক। আমাদের কোন সাবজেক্টের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, কোন সাবজেক্টটা একটু কম পড়লেও চলবে,দিনে কতটা চাপ্টার শেষ করব , কিভাবে শেষ করব, এই সব কিছুর একটি পরিষ্কার প্ল্যান রাখতে হবে। আমরা অনেক সময় পদার্থ, রসায়ন, গণিত, আইসিটি সহ যার যার গ্রুপের কঠিন বিষয় গুলোকে বেশি সময় দিতে গিয়ে বাংলা,ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি এর মত সাবজেক্ট গুলোকে সময় দিতে পারি না। মনে রাখতে হবে, এইসব সাবজেক্টগুলোতে ভালো নাম্বার তুলতে পারলে রেজাল্ট অনেকটা ভালো হয়ে যাবে। তাই কঠিন সাবজেক্টগুলোর সাথে এই সাবজেক্টগুলো সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

 

৩) রুটিন প্রস্তুত করা : আমরা কখন কোন সাবজেক্টের উপর লেখাপড়া করব, কতক্ষণ করব তার জন্য একটি প্রস্তুত করা আবশ্যক। সেই ক্ষেত্রে দুইটি রুটিন ২ টি রুটিন করতে হবে । একটি হচ্ছে ক্লাস খোলা থাকা অবস্থায় ফলো করার জন্য। অন্যটি ছুটির দিনগুলোতে ফলো করার জন্য।

 

৪)স্থান নির্বাচন করা : লেখাপড়ার মনোযোগ সহকারে করার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন আবশ্যক। লেখাপড়ায় কতটা মনোযোগ দেওয়া যাবে তা অনেকেই নির্ভর করে একটি উপযুক্ত স্থান। লেখাপড়ার জন্য যে স্থানটি নির্ধারণ করা হবে, অবশ্যই সে স্থানটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। থাকতে হবে উপযুক্ত আলো  বাতাসের ব্যবস্থা।আমরা যেমন মসজিদে প্রবেশ করলে নামাজের কথা চিন্তা আসে, খাওয়ার জন্য ডাইনিং রুমে প্রবেশ করি, ঠিক তেমনি স্টাডি রুম এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেখানে প্রবেশ করলে পড়ার কথাই মনে আসবে।প্রত্যেক স্টুডেন্টের জন্য একটি সুন্দর স্টাডি কম থাকা আবশ্যক। স্টাডি রুমে গ্রুপ স্টাডিও করা যেতে পারে।   অবশ্যই চেয়ার টেবিলে বসে লেখাপড়া করতে হবে। তাহলে  লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া সম্ভব।

 

৫) মোবাইল থেকে দূরে থাকাঃ লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার জন্য পড়ার সময় মোবাইল থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। যদি লেখাপড়ার সময় মোবাইল হাতে থাকে, বারবার পড়ার মাঝখানে ইচ্ছা হবে, নিউজফিড এ একবার ঘুরে আসতে, কিংবা মেসেঞ্জারে একবার দেখতে যে কেউ মেসেজ দিল কিনা, অথবা পছন্দের কোনো একটি গান শুনে আসতে। পড়ার মধ্যে বসে এই ধরনের কার্যক্রম করলে কখনো পড়ায় মনোযোগ বসবে না। তাই পড়তে বসার আগে অবশ্যই মোবাইলটি নির্দিষ্ট পরিমান দূরে রাখতে হবে।

 

৬)ধর্মীয় কাজ কর্মে মনোযোগী হওয়া :লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি ই হোক, কিংবা ভালো রেজাল্ট, অথবা অন্য যেকোনো ভালো কাজ, প্রতিটির ক্ষেত্রে ধর্মীয় কার্যক্রমের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। নিয়মিত ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে মন ভালো থাকবে। সুস্থ থাকবে দেহ ও মন। আর দেহ মন ভালো থাকলে লেখাপড়ায় অধিক মনোযোগী হওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তাই নিয়মিত ধর্মীয় কার্যক্রম ও অংশগ্রহণ করতে হবে।

 

৭)নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হওয়া : ভালো রেজাল্ট করার জন্য নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হওয়া জরুরী। কারণ নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারলে, পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন ও পদ্ধতি জানা যাবে। শিক্ষকদের সাথে লেখাপড়ার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তাই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে হবে।

 

৮)ক্লাসের পড়া নিয়মিত শেষ করা : ক্লাসের পড়া নিয়মিত শেষ করতে হবে। এতে করে পরীক্ষা এসব প্রশ্নগুলোর প্রস্তুতি ভালোভাবে গ্রহণ করা যাবে।এছাড়াও ক্লাসের পড়া গুলোর বাহিরে আগের পড়া ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়মিত রিভিশন করতে হবে।

 

৯)পড়া জমিয়ে রাখা যাবেনা : ভালো রেজাল্ট করার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস হচ্ছে পড়া জমিয়ে না রাখা। পড়া জমিয়ে রাখলে পরীক্ষার আগের মুহূর্তে এগুলো শেষ করতে প্রচুর চাপ পরে মস্তিষ্কের উপর। কি রেখে  কি পড়বো তা ভাবতে ভাবতে আর পড়াই হয় না। তাই নিয়মিত ভাবে অবহেলা না করে রেগুলার এর পড়া রেগুলার শেষ করতে হবে।

 

১০) নিজের প্রস্তুতি নিজে মূল্যায়ন করা : আগত পরীক্ষার জন্য কতটুকু প্রস্তুত হয়েছো, তা নিজে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রতি সপ্তাহ ও মাসিক ভিত্তিতে নিজে নিজে একটি প্রশ্ন করে তা নিজে নিজে মূল্যায়ন কর। এতে করে নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি ভালো আইডিয়া পাওয়া যাবে। আর কোন কোন জায়গায় গ্যাপ আছে, কি গ্যাপ আছে তা নিজে নিজে বোঝা যাবে। তাই ভালো রেজাল্ট করার জন্য নিজের প্রস্তুতি এর মূল্যায়ন নিজেই গ্রহণ করো।