today visitors: 5073432

কেন আবারও আন্দোলনে ভারতের কৃষকেরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ট্রাক্টর ও ট্রাকের বহর নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি যাচ্ছে দেশটির হাজার হাজার কৃষক। মূলত, বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলনরত কৃষকেরা রাজধানীমুখী। তাদের দাবি, নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য পাওয়া এবং ঋণ মওকুফ করা। সরকার যেন তাদের এসব দাবি মেনে নেয় ও কাজ করে সেজন্যই আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন কৃষকেরা।

ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী প্রদেশ হরিয়ানা। প্রদেশটির পুলিশ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলনরত কৃষকদের দিল্লি যেতে বাধা দেয়। তাদের হটাতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।

রাজধানীতে প্রবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে কাঁটাতার ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে নগরে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ দিল্লিতে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। হরিয়ানার বিভিন্ন শহরের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। আন্দোলনে যোগ দিতে পাঞ্জাবসহ উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের কৃষকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আন্দোলনে কারা অংশ নিচ্ছে

পাঞ্জাব ও হরিয়ানার সংগঠনগুলো ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের ইউনিয়নগুলোও কৃষকদের দিল্লি পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। দেশের কৃষিখাতে সরকারের সহায়তার দাবি করছে তারা।

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এসকেএম, কেএমএম ও কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটি। তারা বলছে, দুইশটিরও বেশি ইউনিয়ন দিল্লি পদযাত্রায় অংশ নেবে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনটি আইন করে ভারতে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। এর জেরে দেশটির কৃষকেরা আন্দোলনে নামে। তাদের আন্দোলনের মুখে ২০২১ সালে সেই আইনগুলো বাতিল করা হয়।

ওই সময়ের আন্দোলন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল এসকেএম। ওই আন্দোলনের পর থেকে কৃষকেরা মোদি বিমুখ। তাদের দাবি, কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি সরকার।

কৃষকদের দাবি

ভারতের কৃষকেরা একটি ন্যূনতম মূল্যের আইনি গ্যারান্টি দাবি করছে; যা কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করবে। একইসঙ্গে কৃষি ঋণ মওকুফের দাবিও করছে। তারা বলছে, নীতির একটি পরিবর্তন কৃষকদের ক্ষতি করে।

প্রতি মৌসুমেই একটি নির্দিষ্ট দামে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ভারত সরকার। বাজারে দাম কমলেও নির্দিষ্ট করা দামেই কিনে থাকে তারা। কৃষকদের দাবি, নির্দিষ্ট করা দাম হতে হবে উৎপাদন খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

বিদ্যুৎখাত বেসরকারিকরণের দিকে এগুচ্ছে বিজেপি সরকার। এ নিয়ে তাদের ওপর নাখোশ কৃষকেরা। এর বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকারগুলো বর্তমানে কৃষকদের ব্যবহৃত বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়। এতে করে তাদের উৎপাদন ব্যয় কমে। পাশাপাশি ২০২০-২১ সালে আন্দোলনের সময় মারা যাওয়া কৃষকদের ক্ষতিপূরণও দাবি করছেন তারা।

আন্দোলনরত কৃষকদের আরেকটি দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অপসারণ। ২০২১ সালের অক্টোবরে উত্তর প্রদেশে ওই মন্ত্রীর ছেলের হাতে হওয়া দুর্ঘটনায় কয়েকজন কৃষক প্রাণ হারান। কৃষকদের অভিযোগ, ইচ্ছে করেই কৃষকদের ওপর গাড়ি তুলে দেয় মন্ত্রীর ছেলে।

কৃষকরা বলছেন, বিতর্কিত তিনটি আইন বাতিল করেছে বিজেপি সরকার। কিন্তু, তারা সেই আইন ফিরিয়ে আনতে উঠে পড়ে লেগেছে। পেছনের দরজা দিয়ে তারা তা আনতে চায়। এমনকি, সবশেষ বাজেটে ফসল তোলার পরবর্তী কার্যক্রমকে বেসরকারিকরণের কথাও বলা হয়েছে।

কৃষকদের আন্দোলন ও দাবি নিয়ে মোদি সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের আইন প্রণেতাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। কিন্তু, কৃষিপণ্য উৎপাদনে এই তিন প্রদেশই এগিয়ে রয়েছে। এই কমিটিকে এখনও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।

বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করছে। প্রতি বছর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দেশটির কয়েক হাজার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়া ও পানি শূন্যতার জন্য দেশটিতে কৃষি উৎপাদন আগের তুলনায় কমছে।

বিজেপি সরকারের প্রতিক্রিয়া

আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে বিজেপি সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। তবে, সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় কৃষকেরা। এ সময় তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। পাশাপাশি কয়েকজন কৃষককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।

ভারতীয় কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবিন্দর শর্মা বলেছেন, ‘দিল্লি এবং হরিয়ানার সীমানা কর্তৃপক্ষ দ্বারা সুরক্ষিত। কৃষকদের রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কীভাবে কৃষকদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখব। রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখব। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে কীভাবে বিচ্ছিন্ন রাখব।’

কৃষক আন্দোলন কীভাবে নির্বাচনে প্রভাব রাখবে

চলতি বছরেই ভারতের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করছে বিজেপি। ভোটের কয়েক মাস আগেই কৃষকদের এই আন্দোলন। দেবিন্দর শর্মা বলেছেন, এই আন্দোলন কীভাবে এগিয় যাবে আমরা তা জানি না। এর কার্যকর সমাধান হবে কি না সে নিয়েও সন্দেহ আছে। যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে এটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।’

১৪০ কোটি জনগণের দেশ ভারত। দেশটির দুই তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষিতে জড়িত। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে কৃষিখাত। এ ছাড়া ভোটের মাঠে তাদের দাপট রয়েছে।