ইমরান হক – স্টাফ রিপোর্টার
মিয়ানমারে প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির জান্তা সরকার। এমন একটি সময় এই ঘোষণা আসলো যখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দেশটির সামরিক বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এ অবস্থায় শনিবার দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করলো জান্তা সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সকল পুরুষকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে অন্তত দুই বছর কাজ করতে হবে। আর নারীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৭ বছরেরে মধ্যে, তাদেরকেও একই মেয়াদে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতে হবে। এর বিষয়ে আর কোন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি জান্তা সরকার। তবে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে যে, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে “প্রয়োজনীয় উপবিধি, প্রক্রিয়া, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি এবং নির্দেশাবলী প্রকাশ করবে”।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। কিন্তু গত মাস থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের সাথে একের পর এক যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত হতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে হামলা চালিয়ে শান রাজ্যের সীমান্ত ক্রসিং এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে নেয়।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রাজ্যটি মিয়ানমারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দিয়েই সড়কপথে চীনের সাথে বেশির ভাগ বাণিজ্য সংঘঠিত হয়ে থাকে। গত মাসে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানিয়েছে যে, তারা মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেতোয়া এবং মিওয়াতে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শেষ সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এর আগে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে সতর্ক করেছিলেন যে, বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশটি ভেঙে যেতে পারে। দেশের সামরিক বাহিনীতে নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যোগদানের বিধান রেখে ২০১০ সালে মিয়ানমারে একটি আইন চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিন সেটি কার্যকর করা হয়নি।
আইনটিতে দুই বছরের জন্য নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে চাকরি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে আইনে এটাও বলা হয়েছে যে, জরুরি অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে চাকরির এই মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। নাগরিকদের কেউ এই আইন না মেনে চাইলে একই মেয়াদে জেল খাটতে পারে বলেও আইনে বলা হয়েছে।
২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল জান্তা সরকার। সম্প্রতি সেই জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালের গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে মিয়ানমার প্রায় ৫০ বছর নিপীড়নমূলক সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এরপর একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি একটি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনী পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয়।
এরপর থেকেই মিয়ানমারে যুদ্ধ ও সহিংসতায় চলে আসছে। এতে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে এবং দল লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।