আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তানে জোট সরকার গঠন নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যাপারে নতুন ফর্মুলা সামনে এনেছেন দল দুটির নেতারা। সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে উভয় দল থেকে আড়াই বছর করে প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খবর জিও নিউজের।
পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৫টি আসন পেয়ে প্রথম অবস্থানে আছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন।
আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪টি আসন পেয়েছে বিলাওয়াল ভু্ট্টো জারদারির পিপিপি। মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) ১৭টি আসন পেয়েছে। কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৪টি আসন না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনই এখন অবধারিত। এক্ষেত্রে শেষ দল দুটি ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠেছে।
ইমরান খানের দল সর্বোচ্চ আসন পেলেও তাদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ দলটি পিএমএল-এন বা পিপিপি কারও সাথে জোট গড়ার সম্ভাবনা আগেই উড়িয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে নওয়াজের পিএমএল-এন ও বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপি জোট সরকার গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
জিও নিউজের প্রতিবেদন মতে, জোট সরকার গঠনের অংশ হিসেবে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিপিপির পার্লামেন্টারিয়ান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
পিএমএল-এনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, আজম নাসির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভির, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমাদ খান, মরিয়ম আওরংজেব ও শেজা ফাতিমা।
বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় দলই সবকিছুর ওপর জাতির স্বার্থ দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, বৈঠকে পিএমএল-এনের নেতারা পিপিপি নেতাদেরকে জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। এরপর ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টি উঠে আসে।
এর অংশ হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের জন্য তারা সরকার গঠন করবেন। এই পাঁচ বছরের মধ্যে পিএমএল-এন ও পিপিপি আড়াই বছর করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। উভয় দলটি প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
ডনের প্রতিবেদন মতে, পিএমএল-এনের অন্যতম নেতা আতা তারার বলেছেন, মিত্রদের সাথে ‘সম্পূর্ণ ঐকমত্যের’ পর প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন,
আমরা এমন একটি অবস্থানে রয়েছি, যেখানে আমরা পাঞ্জাবে সরকার গঠন করতে পারি এবং আমরা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছি। কেন্দ্রের বিষয়ে, পিপিপি ও এমকিউএম-পির সাথে আলোচনা চলছে।
আড়াই বছর করে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির নজির আগেও রয়েছে। ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে প্রাদেশিক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল পার্টির (এনপি) সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেবার এমনই আড়াই বছর করে মুখ্যমন্ত্রী পদটি ভাগ করে নিয়েছিল দুই দল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জেলে ভরে ও তার দলের ওপর নজিরবিহীন দমনপীড়নের মধ্যে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল, পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর আশীর্বাদে আবারও ক্ষমতায় আসতে চলেছেন নওয়াজ শরিফ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। তা ঘটতে দেয়নি ইমরান খানের কর্মীসমর্থকরা। কিন্তু বেশি আসন পেয়েও শেষ পর্যন্ত দলটিকে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।