মোঃ শফিকুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার:-
৫ ফেব্রুয়ারি রোজ মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কে যৌথভাবে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-জীপ মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন সমূহ।
চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া-চকরিয়া-লামা-আলীকদম-বদরখালী-মহেশখালী-সুয়ালক বান্দরবান সড়ক যানবাহন মালিক সমিতি (রেজিঃনং-চট্ট-১৮৩৫), চকরিয়া-লামা-আলীকদম-থানচি-সুয়ালক গজালিয়া সড়ক যানবাহন মালিক সমবায় সমিতি লিঃ (রেজিঃ ৬৯০), আরাকান সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং- বি-৭২৬) ও আরকান সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন একসাথে এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
বাস-জীপ মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নুরুল হোসেন, ফরিদ আহমদ, জহিরুল ইসলাম ও রফিক আহমদ জানান, সড়কে সিএনজি ও মাহিন্দ্র বন্ধের দাবীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আমাদের মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত বাস ও জীপ দ্বারা বিগত ১৯৮২ সাল থেকে লামা, আলীকদম বাসীর পরিবহণ সার্ভিস সেবা এবং প্রশাসনকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সেবা দিয়ে আসছি।
পাশাপাশি চকরিয়া, লামা ও আলীকদম উপজেলার স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়া-আসা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা অব্যাহত সহ সরকারি বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদের গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি। আমাদের সংগঠনের বাস/জীপ মালিক সমিতিতে ৪/৫ শতাধিক মালিক ও ২ হাজারের অধিক শ্রমিক এই পরিবহনের আয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।
বাস মালিক সমিতির সম্পাদক সোহেল রানা পারভেজ, জীপ মালিক সমিতির সম্পাদক জাফর আহমদ ও শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক কামাল আজাদ ও রফিক উদ্দিন বলেন, বর্তমানে লামা, আলীকদম উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো সিএনজি ও মাহিন্দ্রা গাড়ী লামা ও আলীকদম হতে চকরিয়া বেপরোয়াভাবে অদক্ষ চালক দ্বারা গাড়ী চলাচল করার ফলে বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনার স্বীকার হন। লামা ও আলীকদম হতে চকরিয়া যাওয়া-আসা রোড পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ও মারাত্মক বিপজ্জনক সড়ক হওয়ায় আমাদের বাস/জীপ গাড়ীর সাথে সিএনজি ও মাহিন্দ্রা গাড়ী পাল্লা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনারও ঘটছে।
সিএনজি/মাহিন্দ্রা গাড়ীর অদক্ষ চালকগণ বেপরোয়াভাবে যে-যেমন ইচ্ছা এলোমেলোভাবে গাড়ী চালাচ্ছেন। উক্ত গাড়ীর কারণে আমাদের বাস/জীপ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই ব্যাপারে সমাধানের লক্ষ্যে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ইং লামা ও আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা বরাবর সিএনজি ও মাহিন্দ্রা বন্ধ করার জন্য আবেদন করেছিলাম। তারা কোন সুরাহা না করায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচির ডাক দিয়েছি।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকার পরপরই লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কের বাস-জীপ বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ শুরু হয়। সিএনজি মাহিন্দ্র যাত্রী পরিবহনের সময় বাস-জীপ পক্ষের লোকজন কয়েক স্থানে বাঁধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বাস মালিক সমিতির সম্পাদক সোহেল রানা পারভেজ জানায় আমাদের দুইজন ড্রাইভারকে সিএনজি লোকজন মারধর করে আহত করে। তাদের চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লামা সিএনজি ও মাহিন্দ্র চালক সমিতির সভাপতি মোঃ নবী ও সম্পাদক আব্দুল ওহাব বলেন, মানুষের চাহিদা আছে বলে আমরা গাড়ি চালাই। বাস-জীপ মালিকরা এই এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা যাত্রী সেবার নামে হয়রাণী করায় মানুষ তাদের বয়কট করে সিএনজিমুখী হচ্ছে। আজ দুপুরে বাস-জীপ মালিক সমিতির লোকজন আমাদের কয়েকজন সিএনজি ড্রাইভারকে মেরে আহত করেছে।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শামীম শেখ বলেন, রাস্তায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না হয় সেজন্য বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশের টিম রাখা হয়েছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে আমরা সচেষ্ট ও প্রস্তুত আছি।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে লামা সিএনজি ও মাহিন্দ্র সমিতির নেতৃবৃন্দদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। তাদের লামা-চকরিয়া সড়কে রিজার্ভ ভাড়া ছাড়া সাধারণ যাত্রীসেবা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষ নিয়ে বসে সমাধান করা হবে। কিন্তু তার আগে বাস ও জীপ মালিক সমিতি পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা ঠিক হয়নি।