ইমরান হক - স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ইবলিশের ন্যায় যত ধরনের খারাপ কাজ আছে এই সরকারের আমলে সবই হচ্ছে। রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। দুর্নীতি আজ ক্যান্সারের রূপ ধারণ করেছে। বাড়ীতে পন্তা খাওয়ার যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তিরা এমপি হয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। অনৈতিক আকাঙ্খার দরুণ সর্বত্র দুর্নীতিতে সয়লাব হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নেতাদের যেসব গুনাবলি রয়েছে আমাদের দেশের নেতারা তার ধারে কাছেও নেই। তিনি বলেন, ভারতে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাড়ী ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ীওয়ালা তাকে হাড়ি পাতিলসহ রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিলেন। এমন উদহারণ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ এদেশে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত না, সমাহিত। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী তারা আমাদের সঙ্গে আসবে না। তিনি বলেন, একটি দেশদ্রোহী আরেকটি দেশপ্রেমিকের মধ্যে লড়াই হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিতভাবে মনের ঐক্য হয়ে গেছে। কিন্তু জনগণের সামনে আমরা ঐক্যটা দৃশ্যমান করতে পারছি না। আমাদের আহ্বানে জনগণ সাড়াও দিচ্ছে। সরকারকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখিনা। প্রশাসনের অনেক সৎ কর্মকর্তারা প্রতিবাদের কোনো সাহস পাচ্ছে না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জাতীয় বহুমুখী সংকট উদ্ঘাটন ও নিরসনকল্পে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস মুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সভাপতির লিখিত বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সামগ্রিক সঙ্কট নিরসনে নতুন করে ভাবতে হবে। সবকিছু পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে। মতাদর্শিক অবস্থান থেকে ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আমাদের কর্মকা-, কৌশল, নীতি ও পন্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এ সময় অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি।
চরমোনাই পীর আরো বলেন, এমন অবস্থায় সমাধান হতে পারে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমর্থিত মানবতার মুক্তির পথ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস মুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্রই সকল শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের মানুষের রাজনৈতিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। সময়ের একান্ত প্রয়োজন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে কী না, মানবতা নেই। পীর সাহেব বলেন, ক্ষমতা ও লোভের উর্ধ্বে থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জালিমের পতন হবে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এই দেশ এবং জাতিকে বাঁচানোর জন্য সকালের ঐক্য প্রয়োজন। আজ থেকে এক মাস আগে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছিল তা আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু এই সরকারের বিন্দুমাত্র কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি আরো বলেন, এদেশের হাজারো বিরোধী দলের নেতারা জেল খানায় আটক। যদিও তাদের মনে বিন্দুমাত্র হতাশা নেই। আমি মনে করি বিগত দিনের আন্দোলনগুলো কোনোভাবে ব্যর্থ হয়নি। আজকের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অতীতের সব দ্বন্দ্ব থেকে মারাত্মক আকার ধারণা করেছে। এসব হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে। আমরা গণতান্ত্রিক উপয়ে সরকারের এই স্বৈরশাসনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে বিদ্রোহ করা ছাড়া কোন উপায় নেই মন্তব্য করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, পুরো দেশটাই ইবলিশ শয়তানের হাতে পড়ে গেছে। এখন দেশটাকে কিভাবে রক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এখানে আমাদের সঠিক কর্মসূচি নিতে হবে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ আমাদেরকে সমর্থন জানিয়েছে। তাই এখন এমন এক কর্মসূচি পালন করতে হবে যার মাধ্যমে এই সরকারের হায়নার থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করা যায়।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইয়াকুব আলী, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড.অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মুহাম্মাদ নাসরুল্লাহ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামুল বশীর, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ফারুক হাসান, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি খলিলুর রহমান মাদানী।