today visitors: 5073432

গল্প :একটু_সুখে_থাকতে_চেয়েছিলাম_আমি কিন্তু মাঝ রাতে আমার ছাত্রী ফোন করে একি বলল,

মহীয়সী  নারী হাজেরা

– স্যার আপনি খুব খারাপ!আমার আম্মু একটু আগে আত্মহত্যা করেছে।আপনি আমার আম্মুকে ব্লা*ক*মেই*ল করতেন..।সুইসাইড নোটে কারণ হিসেবে শুধু আপনার নামটাই আম্মু উল্লেখ করেছে।

এতো রাতে আমার ছাত্রী রিহানার গলার কন্ঠ স্বর থেকে এমন কথা আমাকে খুব দ্রুতই অবাকের শেষ দিকে নিয়ে গেল।কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকার পর হতভম্ব হয়ে আমি বললাম,

– মাঝ রাতে ফোন করে কি বলছো এসব?তোমার কি মাথা ঠিক আছে?

– স্যার!আমার মাথা ঠিকই আছে।হয়তো বা আপনার মাথা ঠিক নেই।আপনার স্ত্রী তো প্রে*গ*নে*ন্ট!শারীরিক চাহিদা আপনাকে এতোটাই নিম্ন স্তরে পৌঁছে দিয়েছে,যে আমার মায়ের উপর আপনার লোভাতুর খারাপ দৃষ্টি ফেলতেও দ্বিধা বোধ করেন নি!

– রিহানা তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?কি-সব আজেবাজে কথা বলে চলেছো?

– আপনার কি মনে হয় আমি মজা করার মতো মেয়ে?চোখের ঠিক সামনেই আমার মায়ের লাশ জুলে আছে সিলিংফ্যানের সঙ্গে।বাবা তো সেই কবেই দুনিয়ার মূর্ছা ত্যাগ করেছে।এই পৃথিবীর ভূখন্ডে আমার অতি আপন বলতে আর কেউই রইলো না।আপনি আমার টিউশনির প্রিয় একজন স্যার ছিলেন।আপনার প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান,শ্রদ্ধাভক্তি ছিল।কিন্তু আজ সব শেষ হয়ে গেল।আপনি আমার দেখা একজন জঘন্য মানুষে রুপান্তরিত হলেন।আপনি টিউশনির স্যার নামের এক কলঙ্ক মাত্র তাছাড়া আর কিছুই নয়।আপনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না স্যার! “কখনোই না।”

কথাগুলো বলার পরপরই ফোন কেটে দিলো রিহানা।সব কিছুই যেন আমার মাথার উর্ধে দিয়ে গেলো।এসব কি বলল রিহানা?কিছুই জানিনা কেনো আমার মাথার গহীনে ঢুকলো না।এই মুহূর্তে ভাবাতে বিভোর আমি।বেশ কয়েক-বারই রিহানার নাম্বারে কল করেছিলাম।কিন্তু রিং বাজলেও ফোন উঠায় নি।ঘন্টার কাটা প্রায়ই চারটার কাছাকাছি।শোয়া অবস্থায় আচমকা ঘুমঘুম চোখে পেছন থেকে হাত টেনে ধরে আমার স্ত্রী রুহি বলল,

– কি ব্যাপার!এতো রাতে তুমি এভাবে বসে আছো কেনো?

হকচকিয়ে আমি বললাম,

– হঠাৎ ঘুম ভাঙাতে এখন আর ঘুম আসছে না।তাই বসে রয়েছি।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।অন্যথায় শরীর খারাপ করবে।

অতএব আর কিছু বলল না রুহি।হাত টেনেই,কিছুটা জোর করে, আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের নিকটে এনে গলা জড়িয়ে ধরলো এবং ভ্রু-কুচকে “ঠোঁট বেঁকিয়ে একটু মুচকি হেঁসে রুহি বলল,

– নিশ্চই কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো তাই হয়তো ঘুম আসছিল না।কিন্তু এখন দেখবো তোমার ঘুম কেনো আসবে না!

প্রতিউত্তরে কিছুই বললাম না আমি।রুহির খুব কাছে থাকলে,কেনো যেন আমার সব ধরনের চিন্তাদুশ্চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে যায়।মনের ভেতরটায় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।কিন্তু আজ এসব কিছুই হচ্ছে না।ঘুম আসছে না আমার চক্ষু জোড়ায়।ভেতরে ভেতরে অনেক আতংক ও বিভ্রাটের মধ্যে বসবাস করছি আমি।হঠাৎ আমাদের ফ্লাটের কলিংবেল টং করে বেজে উঠলো।রুহি প্রায় ঘুমিয়েই পরেছিল।কিন্তু কলিংবেলের শব্দে ঘুমের আভাটা ওর কেটে যায়।

রুহি বলল,

– এই শুনছো?এতো রাতে কে আমাদের ফ্লাটের কলিংবেল বাজাতে পারে?

– আমারও তো একই কথা!দরজা খুলে দেখছি।

– “না”। “দাঁড়াও?

– কেনো?

– চোর ডাকাত অথবা দুষ্কৃতকারীও তো হতে পারে?

– বর্তমানে বাড়িতে চুরি ডাকাতি বা দুষ্কৃতকারীদের আগমন অতোটাও সহজতর নয় রুহি।

অতঃপর শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি এবং ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললাম।সাথে সাথে পুলিশের আগমন ঘটলো ফ্লাটে।অবশ্য যেটার পূর্বাভাস আমি অনেক আগে থেকেই পাচ্ছিলাম।”কলার চেপে ধরে একজন পুলিশ অফিসার বলল,

– তুই শাহরিয়ার?

– হ্যাঁ।

– থানায় চল!ব্লাকমেইল করা জন্মের মতো শিখিয়ে দিবো।

– দেখুন আমার কথাটা একটু শুনুন!আপনাদের ভুল ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।আমি ওনার সাথে ওসব কিছুই করিনি।

– আমাদের সাথে চুপচাপ থানায় যাবি নাকি মারধর করে নিয়ে যেতে হবে?

জবাবে আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তার পূর্ব মুহূর্তেই রুহি এসে বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল,

– পুলিশ!আমাদের ফ্লাটে পুলিশ কেনো এসেছে?আর আপনি আমার স্বামীর শার্টের কলার কেনো চেপে ধরেছেন? “হাও ডেয়ার ইউ”! ওকে ছাড়ুন বলছি!

– এখন তো শুধু মাত্র কলারটাই ধরলাম।থানায় গেলেই বুঝবে পুলিশের লাঠির আঘাত কতটা না যন্ত্রণা-দায়ক হয়।

– এসব কি বলছেন!আমার স্বামী থানায় কেনো যাবে?কোন অপরাধে ভূষিত করে,ওকে আপনারা থানায় নিয়ে যাবেন?

জবাবে পুলিশ অফিসারটি আমার কলার ছেড়ে দিয়ে অনেকটা গম্ভীর গলায় বলল,

– আপনার স্বামী বাসায় গিয়ে,যেই মেয়েটাকে টিউশনি করাতো,ওর মা’কে ব্লা*ক*মেই*ল করতেন।ফলস্বরূপ এই তো প্রায়ই অনেক্ষণ পূর্বে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।সুইসাইড নোটে স্পষ্ট ও সাবলীল ভাষায় একমাত্র আপনার স্বামীর নামটাই তিনি উল্লেখ করেছেন।

– কি বলছেন এসব!আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।আর তাছাড়া একটা সাধারণ সুইসাইড নোটের ওপর নির্ভর করে আমার স্বামীকে আপনারা একদমই গ্রেফতার করতে পারেন না।আপনারা সুনিশ্চিত তো সুইসাইড নোট স্বয়ং ওনার নিজের হাতেরই লেখা?এটাও তো হতে পারে অন্য কেউ ওনাকে খুন করে দোষটা সম্পূর্ণই আমার স্বামীর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।পরিশেষে স্পষ্ট ভাষায় একটাই কথা আমি বলবো,আমার স্বামী অর্থাৎ শাহরিয়ারকে কেউ মিথ্যাচারে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাছাড়া আর কিছুই নয়।

– চুপ করুন!আপনার স্বামী কি কোনো বড় কিছু,যে তাকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করবে!সুইসাইড নোট স্বয়ং ওনার নিজের হাতেরই লেখা ছিল।এখন শুধুই অপেক্ষারত পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের জন্য।সেটাও খুব শীঘ্রই বেরিয়ে আসবে।এখন আর কথা বাড়াতে চাই না। আপনার স্বামীকে আমাদের সাথে থানায় তো বাধ্যতামূলক যেতেই হবে।প্লিজ বাঁধা দেওয়ার কোনো প্রকার বৃথা প্রচেষ্টা করবেন না।যা কথা সব থানাতেই হবে।

অতঃপর আমাকে হাতকড়া পড়ানো হলো।রুহির চক্ষু জোড়া তখন জলে ভিজে গিয়েছিল।মোটেও তখন রুহির দিকে তাকাতে পারিনি, আমি।ওর চোখে চোখ রাখতে পারিনি।অতএব আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।পরেরদিন সকাল দশ ঘটিকায় রুহি থানায় এলো।ওর চোখ মুখ আমাকে ইঙ্গিত করছিল প্রচুর কেঁদেছে -ও- “প্রচুর!ধীরে ধীরে চোখের বাঁধ আমারও নরম হয়ে ভেঙে পরার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।তবুও বাঁধ জোড়া শক্ত করে রুহির ফর্সা দুটো গাল স্পর্শ করে আমি একটা কথাই বললাম,

– আমি নির্দোষ নিরপরাধ।আমাকে অবিশ্বাস করোনা রুহি!

কথার উত্তরে রুহি বেশ একটা ভেজা গলায় বলেছিল,

– পরিস্থিতি যেমনই হোক শাহরিয়ার।তোমার উপর আমার দীর্ঘ বিশ্বাস কখনো উঠে যাবে না।আমি জানি তুমি নির্দোষ।বিশ্বাস রাখো সৃষ্টিকর্তার উপর।নিশ্চই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

কথা-গুলো বলার পরপরই সেদিন রুহি চলে গিয়েছিল।যার দু-দিন পর থানায় নতুন এক ওসির আগমন ঘটলো।যাকে মূলত ট্রান্সফার করে এখানে নিয়ে আসা হয়।’কিন্তু ওনাকে দেখা মাত্র আমার এবং রুহির দুজনেরই চক্ষু জোড়া কপালে উঠে যায়।রুহির চোখে তখন জল টল-মল করছিল কারণ এই ওসি আর কেউ নয় স্বয়ং আমার স্ত্রী রুহির আপন বড় ভাই।নিজের হাতে খাবার তৈরী করে এনেছিল রুহি।কিন্তু পারলোনা মুখে তুলে দিতে আর না পারলো এড়িয়ে যেতে।রুহির বড় ভাইও হয়তো বা আমাদের দেখে এই মুহূর্তে অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছেন।একটা ফাইল ও কিছু রিপোর্ট হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে রুহির বড় ভাই জাহিদ এবং খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথেই রুহিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন,

– যেমনটা আমরা সবাই আশা করেছিলাম।ঠিক আজ তার বেতিক্রম হলো না।আমরা পূর্বেই তোকে বহুবারন করেছিলাম।এই ছেলেকে বিয়ে করিস না।কিন্তু জেদি মেয়ে আমাদের কোনো কথাই তুই শুনিস নি।সবার পছন্দ করা পাত্রকে ঠুকরে কোথাকার এই অনাথ ছেলেটার প্রেমে মজলি।কি পেলি ওকে বিয়ে করে?ত্যাজ্য সন্তান হলি,সমস্ত ধন-সম্পদ থেকে বহিষ্কার হলি।সব কিছুই হারালি পরিশেষে কি পেলি?বল আমায়?তোর স্বামীর চরিত্রই তো খারাপ!পড়ানোর নাম করে ছাত্রীর মাকে ব্লাকমেইল করতো।কু-প্রস্তাব দিতো।

– শাহরিয়ার এমন কিছু করেনি ভাইয়া।ও এমন নয়।ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।

– চুপ!এখানে আমার একটা সম্মান আছে।অন্তত ভাই ডেকে সেটা নষ্ট করে দিস না প্লিজ।পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বেরিয়েছে,সেখানে স্পষ্টই উল্লেখিত রয়েছে,ওটা আত্মহত্যাই ছিল।তাছাড়া আরও বিভিন্ন প্রমানও আমাদের নিকট রয়েছে, তোর চরিত্রহীন স্বামীর বিরুদ্ধে। ও দোষী।সাঁজা পাবেই।এছাড়াও আমি ভাবতেও পারছি না তুই এখনো ওকে কি করে সাপোর্ট করতে পারিস?

জবাবে শত দুঃখের ভীড়ে একটু মুচকি হাঁসলো রুহি এবং বলল,

– ভালোবাসা।

কথাটা বলেই রুহি এক-পলক তাকালো আমার দিকে।তারপর থানা থেকে বের হয়ে গেল।জানিনা কি আমার দোষ!কেনো এমন হলো?আমি তো কোনো অপরাধ করিনি তাহলে কেনো আজ আমি এই অন্ধকার জেলে?ছোট্ট একটা চাকরি করতাম।যা দিয়ে সংসার চালানো বেশ কষ্টের ছিল।তাই তো পাশাপাশি একটা টিউশনিও করাতাম আমি।রিহানার মা তো খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।তাহলে কেনো তিনি মৃত্যুর পথটা বেছে নিলেন?এবং তার দ্বায়ী হিসেবে আমায় কোনোইবা উল্লেখ করলেন?যেখানে আমি নির্দোষ,এমন কিছুই করিনি।জানিনা কি হচ্ছে এসব!মনে তো হচ্ছে গভীর থেকেও গভীর কোনো ষড়যন্ত্র।কেনো আল্লাহ সর্বদা নির্দোষকেই ফাঁসানো হয়?দোষীরা তো ঘুরেবেড়ায় মুক্ত আকাশে,খোলামেলা,রাস্তা-ঘাটে!

“পরের দিন সকাল সকাল একজন কনস্টেবল এসে যখন কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করেই বলল,

– থানায় আসার পথে,কোনো একটা গাড়ির চাপায় আপনার গর্ভবতী স্ত্রী প্রাণ হারিয়েছেন।

“যা শোনা মাত্রই আমার অন্তরমহলে তিল তিল করে গড়ে ওঠা সাম্রাজ্য ভাঙতে আরম্ভ করে……………