শেষ বলে বোলিংয়ে আসার আগে বড় ভাই গ্রেগের সঙ্গে খানিকটা শলা-পরামর্শ করে নেন ট্রেভর। স্ট্রাইকে থাকা কিউই ব্যাটার ম্যাকেঞ্জির ছক্কা-টক্কা মারার জন্য তেমন সুনাম না থাকলেও ছোট ভাইকে আন্ডারআর্ম বল করতে নির্দেশ দেন গ্রেগ। গড়িয়ে বল করা তখন ক্রিকেটে নিষিদ্ধ নয়। তাই আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেই এই বল করেন ট্রেভর।
ট্রেভরের এই বোলিং অ্যাকশন দেখে বেশ চটে যান স্ট্রাইকে থাকা ম্যাকেঞ্জি। ক্রিকেটের চেতনা বিরোধী এই অ্যাকশন যে তার একদমই পছন্দ হয়নি সেটা বোঝা গিয়েছে এই কিউইর আচরণে। দলের জন্য ৬ মারাটা বেশ প্রয়োজনীয় হলেও ওই বলে জোরে মারার কোনো চেষ্টাই করেননি তিনি।
ট্রেভরের আন্ডারআর্ম বলটি ঠাণ্ডা মাথায় ঠেকিয়ে দিয়ে রাগে-ক্ষোভে ব্যাট উপরের দিকে ছুঁড়ে মারেন তিনি। ট্রেভরও এই বলের পর ব্যাটারের দিকে তাকানোর সাহস করেননি। আম্পায়ারের কাছ থেকে নিজের টুপি সংগ্রহ করে সরাসরি মাঠ ছাড়েন তিনি।
ক্রিকেটে এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে বেশ। ক্রিকেট খেলুড়ে অন্যান্য দেশ তো বটেই গ্রেগ চ্যাপেল এবং ট্রেভর চ্যাপেলের এমন কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ানরাই। শুধু তাই নয়, দুই ভাইয়ের এই কাজের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন তাদের আরেক ভাই ইয়ান চ্যাপেল।
ম্যাচ চলাকালে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন ইয়ান। সেখান থেকেই তিনি বলে ওঠেন, 'না গ্রেগ, এটা তুমি করতে পার না।' রাগে-দুঃখে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চ্যাপেল পরিবারের সুনাম আজ ধুলায় মিশে গেল।’ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলও এই কাজের তীব্র সমালোচনা করেছিল।
ক্রিকেটীয় আইনে থাকলেও এই ঘটনা নিয়ে হইচই হয় বেশ। এর মাত্রা এতোটাই ছিল যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও খানিকটা অস্থিরতা দেখা দেয়। নিউজিল্যান্ডের সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মুলডুন কোনোরকম কূটনৈতিক শিষ্টতার ধার না ধেরে সরাসরিই বলে ফেলেছিলেন, ‘এটা একটা কাপুরুষোচিত কাজ।’
নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন রেডিও শো'তেও এটি নিয়ে হাস্যরস করা হয়েছে প্রচুর। প্রতিবেশী দেশের দুই ক্রিকেটারের ওপর নিউজিল্যান্ডের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ এতোটাই চরম রূপ ধারণ করেছিল যে, চ্যাপেল ভাইদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য লিখে টি-শার্ট পর্যন্ত বানিয়েছে তারা। এই ঘটনার কিছুদিন পর ক্রিকেট থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয় আন্ডারআর্ম বোলিং।