নিজ্স্ব প্রতিনিধি :
অপহরণের প্রায় এক মাস পর উদ্ধার করা হয়েছে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে। তার নাম কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে হিমেল। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) পড়ছেন। পেশাদার আন্তর্জাতিক অপহরণকারীচক্রের সদস্যের হাতে ২৬ ডিসেম্বর তিনি অপহৃত হন। বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হিমেলকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন অপহরণকারীকে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জানান, ভারতের মেঘালয় থেকে সে দেশের নাগরিকদের অপহরণ করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলকায় এনে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছিল একটি চক্র। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে এ দেশের নাগরিকদের অপহরণ করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত চক্রটি। র্যাব-পুলিশের প্রায় এক মাসের সাঁড়াশি অভিযানে অপহরণকারী ওই চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হিমেলকে অপহরণ করেছিল।
র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব নিজস্ব পদ্ধতিতে অভিযান চালিয়ে হিমেলকে উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি নেত্রকোনা, তাহিরপুর ও রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা মালেকসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে অগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, হিমেল বসবাস করেন উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে। পড়াশোনা করেন উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১০ নম্বর সেক্টরে। চার মাস আগে তার বাবা মারা যান। পারিবারিক ব্যবসার প্রয়োজনে ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে ড্রাইভার সামিদুলকে নিয়ে উত্তরার বাসা থেকে শেরপুর জেলার উদ্দেশে রওয়ানা হন হিমেল। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। হিমেলের মা তহুরা হকসহ স্বজনরা বারবার ফোনে কল করেও তাকে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্তানকে না পেয়ে ওইদিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মা তহুরা হক। ইতোমধ্যে একাধিক ভারতীয় মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হিমেলের মাকে ফোন করা হয়। ছেলেকে মুক্ত করতে মুক্তিপণ হিসাবে দুই কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে হুমকি দেওয়া হয়, ৩০ লাখ টাকা না দিলে হাত কেটে হিমেলকে হত্যা করা হবে।
বিষয়টি র্যাব এবং ডিবি পুলিশের নজরে এলে এ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দুটি ইউনিট। তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানাধীন টাঙ্গুয়ার হাওড় এলাকায় লাগাতার অভিযান চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে অপহরণকারীচক্রের সদস্যরা হিমেলের গাড়িটি ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে গাজীপুর জেলার বাসন থানা এলাকায় ফেলে রাখে।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুলিশকে দিয়ে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলা ননগ্লাম থানার পাহাড়ি এলাকায় একাধিক অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে ভিকটিমের জুতা, ব্যাগ, মোবাইল সেট এবং অনেক মোবাইল নম্বরসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় অপহরণের ধারায় নিয়মিত মামলা হয়। পরে মামলাটি উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে ডিবি লালবাগ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিএমপি-ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, মঙ্গলবার বিকালে শরীয়তপুর জেলার গোসাইহাট থানাধীন একটি প্রত্যন্ত চর থেকে অপহরণকারীচক্রের সদস্য মাসুদকে গ্রেফতার করে ডিবি লালবাগের একটি টিম। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণ চক্রান্তে জড়িত রুবিনা ও কামরুন্নাহারকে ওইদিন সন্ধ্যায় তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে ডিবি বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারে, চক্রের মূল হোতাসহ চারজন টাঙ্গুয়ার হাওড়ে একটি নৌকায় অবস্থান করছে। বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার, ওসি মধ্যনগর, ওসি তাহিরপুর ও টাঙ্গুয়ার হাওড় এলাকার টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির আইসিকে জানানো হয়। সেখানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন আব্দুল মালেক, ড্রাইভার সামিউল, মানিক মিয়া ও মোবারক হোসেন।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা ডিবি পুলিশের রিকুইজিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় চার আসামিকে গ্রেফতার করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের র্যাব সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। পরে তারা আসামি মালেক ও সামিউলকে নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় হিমেলকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান।