প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ৪:২৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারী ২৩, ২০২৪, ৭:৩৭ পি.এম
শুল্ককর ছাড় দিতে এনবিআরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি
স্টাফ রিপোর্ট রাজিব হাওলাদার:
ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ককর ছাড় দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এসব পণ্যের আমদানি শুল্ক ও কর কমলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য তিনটির দাম কমতে পারে।
সোমবার এগুলোর শুল্ককর কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগের দিন রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, রোববারের বৈঠকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি এনবিআরে। একই ধরনের চিঠি দুই মাস আগেও পাঠানো হয়েছিল।
বাণিজ্যসচিব আরও জানান, চিঠিতে ভোজ্য তেলে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো এবং চিনিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শুল্ককর কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে খুব দামি না অথচ সাধারণ মানুষ বেশি ব্যবহার করে-এমন খেজুরের ওপর।
বছরে ২০ লাখ টন চাহিদার চিনি আমদানিতে বর্তমানে পাঁচ ধরনের শুল্ককর রয়েছে। প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে আগে আমদানি শুল্ক ছিল নির্ধারিত ৩ হাজার টাকা। গত নভেম্বরে তা কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। এর বাইরে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ৩ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) এবং ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) রয়েছে।
পরিশোধিত চিনিতে বর্তমানে আমদানি শুল্ক নির্ধারিত ৩ হাজার টাকা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, এআইটি ৫ শতাংশ, এটি ৫ শতাংশ এবং আরডি রয়েছে ৩০ শতাংশ। দুই ধরনের চিনিতে এ শুল্ককর কাঠামো আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এই দুই ধরনের চিনি আমদানিতেই ৩০ শতাংশ আরডি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে এনবিআরকে।
বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। ভোজ্য তেল আমদানির ওপর বর্তমানে ভ্যাট রয়েছে ১৫ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এনবিআরকে এই ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করেছে।
ভোজ্য তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ২০২২ ও ২০২৩ সালজুড়ে কয়েক দফায় ভ্যাট ছাড় দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ভ্যাট-ছাড় সুবিধা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আমদানি পর্যায়ে শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড় সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ জানালেও এনবিআর আর তা মানেনি। ফলে বর্তমানে ভ্যাট ১৫ শতাংশই রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে খেজুরের ওপর বেশি শুল্ককর আরোপ করা হয় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার তা কিছুটা আমলে নিচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে, যার পুরোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। খেজুরের মানও বিভিন্ন ধরনের। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এআইটি, ৫ শতাংশ এটি এবং ৩ শতাংশ আরডি রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে জানিয়েছে, তুলনামূলক কম দামের খেজুরে যেন শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে অগ্রগতি জানতে গত রাতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সংস্থাটির একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, যেহেতু আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং প্রায় সবাই শুল্ককর কমানোর পক্ষে সায় দিয়েছে, ফলে তারা এ বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেন।
বর্তমানে চিনি, ভোজ্য তেলসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গতকাল প্রতি কেজি চিনি ১৪০-১৪৫ টাকা, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০-১৭৩ টাকা, প্রতি লিটার পাম ১২৫-১৩৫ টাকা এবং মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ছিল ২৫০-৪২০ টাকা।
প্রথম বুলেটিন
Copyright © 2024 . All rights reserved.