মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হবিগঞ্জের এক নারী কয়েদি ও তাঁর ১১ মাসের শিশুকে কারাগারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে দৈনন্দিন খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর কারাগারের যে কক্ষে মা ও শিশুটিকে রাখা হয়েছে, সে কক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে। হাইকোর্টে পাঠানো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
‘ফাঁসির সেলে কেমন আছে ১০ মাসের মাহিদা’ শিরোনামে গত বছর ৩০ নভেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়।ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গত ১৪ ডিসেম্বর জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। গত ১৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
হবিগঞ্জের জেলা কারাগারের কনডেম সেলে মা ও শিশুটিকে কী ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে, তা জানাতে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ও হবিগঞ্জের কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় তখন।সেই ধারাবাহিকতায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সম্প্রতি এ প্রতিবেদন দেন।
আগামী রবিবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানান রিটকারি আইনজীবী তানভীর আহমেদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটি হলফনামা করতে রাষ্ট্রপক্ষ সময় নিয়েছে। আগামী রবিবার পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।জেল সুপার হালিমা খাতুনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুসহ এ নারীকে গত বছর ২৬ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে আনা হয়। পরে ৯ ডিসেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নারী বন্দিদের অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা ব্যবস্থাপনায় রাখা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারী ও তাঁর শিশুটিকে ৪৫ বাই ২২ ফুটের একটি ওয়ার্ডে রাখা হয়। এই ওয়ার্ডে ১৩ বাই ১১ ফুটের ৩টি টয়লেটসহ ওয়াশরুম, ৬টি সিলিং ফ্যান, ৮টি লাইট, ১টি দরজা, ৬টি জানালা এবং ১০ বাই ৫ ফুটের একটি বারান্দা রয়েছে। ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দির শিশুসহ অন্য নারী বন্দির সঙ্গে কারাগারে থাকা শিশুদের জন্য ৪৫ বাই ২২ ফুটের একটি কক্ষে খেলনাসহ শিক্ষণীয় প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র স্থাপনের মাধ্যমে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা আছে। এ ছাড়া মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের (৬ বছর পর্যন্ত) নিয়মিত খিচুড়ি, ডিম, দুধ ও কলা সরবরাহ করা হয় এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুকে মশা-মাছি থেকে রক্ষার জন্য ছোট মশারি সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের প্রয়োজনীয় পোশাক, নতুন নতুন খেলনা ও লেখাপড়ার সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এমনকি বিভিন্ন দিবসে শিশুদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও দিবসের তাৎপর্য অনুযায়ী নতুন পোশাক, খেলনা ও কেকসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করা হয়।
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট শিশু সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নারী বন্দি ও তাঁর সঙ্গে থাকা ১১ মাস ১৩ দিন বয়সী কন্যা শিশু সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্ণিত সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এবং তাদের দৈনন্দিন খাবার সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।