ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারে উঠছেন, বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

নিজস্ব প্রতিনিধি :

গাড়িতে তুলেই টার্গেট ব্যক্তির হাত-পা বেঁধে চোখে পরিয়ে দেয়া হয় কালো চশমা। এরপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। কেড়ে নেয়া হয় অর্থ। এ রকম অন্তত বিশটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, 
 

ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রাইভেটকার নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন তারা। ভাড়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে তোলা হয় যাত্রী। গাড়িতে ছদ্মবেশী আরও দুজন টার্গেট যাত্রীর পাশে গিয়ে বসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রকাশ পায় সহযাত্রীদের আসল চেহারা। ব্যাপক মারধর করে সর্বস্ব লুটের পর ফেলে দেয়া হয় নির্জন এলাকায়। গত এক মাসে এরকম অন্তত ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিশেষ করে ভোরের দিকে প্রাইভেটকার নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা গাড়িতে না ওঠার পরামর্শ দিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীকে গাড়িতে তুলেই টার্গেট ব্যক্তির হাত-পা বেঁধে চোখে পরিয়ে দেয়া হয় কালো চশমা। এরপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। কেড়ে নেয়া হয় অর্থও।

তিনি বলেন,
গত ৫ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকায় বাস স্টপেজে একটি প্রাইভেটকার থামার পর অপেক্ষারত দুজন এগিয়ে যান। তারা গাড়িতে ওঠার পর এগিয়ে যান আরেকজন ব্যক্তিও। তিনিও ওঠেন প্রাইভেটকারটিতে। প্রাইভেটকারে যাত্রী হিসেবে ওঠা তৃতীয় ব্যক্তি সম্মুখীন হন তিক্ত অভিজ্ঞতার। বনানী পার হওয়ার পর প্রকাশ পায় সহযাত্রীদের আসল পরিচয়। তারা মূলত ছিনতাইকারী। হাত পা বেঁধে, চোখে কালো চশমা পরিয়ে শুরু হয় মারধর। সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে, তাকে ফেলে দেয়া হয় ধামরাই এলাকায়।

আবার গত বছরের ৯ নভেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুল এলাকার আরেকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টার দিকে প্রাইভেটকার থেকে নেমে তিনজন পথ আগলে ধরে দুজনের। নিজেদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাদেরকে তোলা হয় গাড়িতে। এখানেও টার্গেট ব্যক্তির হাত-পা বেঁধে চোখে পরিয়ে দেয়া হয় কালো চশমা। শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। আদায় করা হয় পাঁচ লাখ টাকা, জানান তিনি।

 ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, গাড়িতে ওঠার পর তারা তাকে বেদম মারধর করা শুরু করে। তাদের হাতে হাতুড়ি, প্লাস এই ধরনের জিনিস ছিল। একটা সময় তারা হাতের নখ তুলে ফেলার চেষ্টাও করে।  
  
এরকম চারটি মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে চক্রটিকে। গ্রেফতার করা হয়েছে এক নারীসহ চারজনকে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কখনো ডিবি পরিচয়ে, কখনো আবার যাত্রী গাড়িতে তুলে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিল। গত দেড়মাসেই তারা ২৪টি ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
 
ডিবি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের পর তিনশো ফিট, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ, সাভার-ধামরাই, কেরানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাতে ভুক্তভোগীকে ফেলে যাচ্ছে। যাত্রী হিসেবে এ ধরনের পরিবহনে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।