‘পুলসিরাত’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘পুল’ ও ‘সিরাত’। ‘পুল’ শব্দটি ফারসি। এর অর্থ সেতু।‘সিরাত’ আরবি শব্দ। এর অর্থ রাস্তা বা পথ। তবে ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ পারলৌকিক সেতু বা পুল। পুলসিরাত শব্দের অর্থ যে রাস্তা পুলের মতো বা পথের সেতু।হাশরের ময়দানে জান্নাত ও জাহান্নাম হাজির করা হবে। জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা হবে পুলসিরাত। এর শেষ প্রান্তে থাকবে জান্নাত। এটি হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।অন্ধকারাচ্ছন্ন এই ভয়াবহ পথ প্রতিটি মানুষকে অতিক্রম করতে হবে। কারণ সেটাই হবে জান্নাতে পৌঁছানোর একমাত্র পথ।
পুলসিরাতের সংজ্ঞায় ইমাম গাজালি (রহ.) লিখেছেন, ‘পুলসিরাত হলো জাহান্নামের ওপর প্রলম্বিত সেতু, যা তলোয়ারের চেয়ে ধারালো হবে এবং চুলের চেয়েও সূক্ষ হবে। কাফির ও পাপাচারীরা সেখানে পদস্খলিত হয়ে নিচে পতিত হবে। সেখানে জাহান্নাম অবস্থিত থাকবে।আর মহান আল্লাহ ঈমানদারদের পা সুদৃঢ় রাখবেন। ফলে তারা চিরস্থায়ী নিবাসে পৌঁছে যাবে।’ (কাওয়াইদুল আকায়িদ, ইমাম গাজালি : ১/৬৬)
মুহাম্মদ (সা.) সর্বপ্রথম পুলসিরাত অতিক্রম করবেন। আর সব উম্মতের মধ্যে উম্মতে মুহাম্মাদী সর্বপ্রথম তা পার হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অতঃপর জাহান্নামের দুই পার্শ্বদেশে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। অতঃপর আমাকে সর্বপ্রথম আমার উম্মতকে সঙ্গে নিয়ে পার হয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮০৬)
আর সর্বশেষে পুলসিরাত অতিক্রমকারীর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বশেষে যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে পুলসিরাতের ওপর চলতে থাকবে, একবার মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে এবং আরেকবার আগুন তাকে জ্বালিয়ে দেবে। অতঃপর যখন (এ অবস্থায়) সে জাহান্নামের সীমানা অতিক্রম করে আসবে, তখন জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে বলবে, ‘বড়ই কল্যাণময় সেই মহান সত্তা! যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দান করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন কিছু দান করেছেন, যা আগের ও পেছনের কোনো লোককেই তা প্রদান করেননি।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৩৭১৪; মুসলিম, হাদিস : ১৮৭)
অর্থাৎ সর্বশেষে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়ে পুলসিরাত পার হওয়ার পরে তার মনে হবে যে আল্লাহ তাকে এই ভীতিকর পুলসিরাত পার হওয়ার তাওফিক দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছেন পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো মানুষের প্রতিই তিনি সেই অনুগ্রহ করেননি। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ সবাইকে পুলসিরাত অতিক্রম সহজ হওয়ার আমল করার তাওফিক দান করুন।