সন্ধ্যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ১০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে কার্টনটিসহ এক ব্যক্তি ধরা পড়েন। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হলে তার নির্দেশে কার্টনসহ ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টন খুলে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এই টাকা গণনা শেষে জব্দ করা হয়। টাকা ভর্তি কার্টন জব্দের বিষয়ে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
একই সঙ্গে ওই টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ট্রেজারিতে জমা রাখা হয়। পরে গত ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দুদকে চিঠি দেন।
ঘটনার বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের আউটসোর্সিংয়ের সাবেক কর্মচারী মো. জাহিদুল ইসলাম সুমনের কাছে একটি কার্টন পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী রিফাত হোসেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টরকে ঘটনাটি অবহিত করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কার্টনে নগদ টাকা থাকার কথা স্বীকার করেন সুমন।
সচিব জানান, পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জব্দ তালিকা তৈরি করে দেখা যায়, কার্টনে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়, এতে এক হাজার টাকার ৩ হাজার ৭০০টি নোট এবং ৫০০ টাকার এক হাজারটি নোট পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে ওই টাকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনে করেন যে, জব্দ করা ৪২ লাখ টাকা দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট অর্থ এবং ধারণা করা হচ্ছে এ কার্যক্রমের সঙ্গে আরও ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরপর এ ঘটনায় গত ১৬ ডিসেম্বর দুদকের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি মামলা হয়।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় ৪২ লাখ টাকার কার্টন বহনকারী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার কাওসার আমেদকে আসামি করা হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে আসামি সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে গ্রেফতার করে আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার অপর আসামি জাহিদুল ইসলাম সুমনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গত ১০ জানুয়ারি আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের আউটসোর্সিংয়ের সাবেক কর্মচারী মো. জাহিদুল ইসলাম সুমনের কাছে বিয়াল্লিশ লাখ টাকার কার্টন পাওয়া গেলে নিরাপত্তা কর্মী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অবহিত করে। পরে আমি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের টাকার কার্টন জব্দ করার নির্দেশ দেই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমন বলেছেন, টাকাটা রানা নামে তার এক আত্মীয়ের। তার কথাবার্তায় সন্দেহ হলে আমরা আরও জোরালোভাবে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় টাকাটা সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদ তার কাছে রাখতে দিয়েছেন। এরপর আমি দুদককে জানালে তারা তাৎক্ষণিক মামলা করে। তারা এজাহার দাখিল করে আদালতে দেয়। আমরাও থানায় একটি জিডি করি।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যেহেতু দুদক মামলা করে অভিযুক্ত সার্ভেয়ারকে গ্রেফতার করেছে, তার বিরুদ্ধে তারাই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটা দুদক অনুসন্ধান করে বের করবে। তবে পাশাপাশি আমরাও জেলা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্ত সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে সাসপেন্ড করেছি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তারা (তদন্ত কমিটি) তদন্ত করছেন। আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, এল এ শাখার কেউ জড়িত আছে কিনা তারা তদন্ত করছেন। যদি আরও কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।