ভোলা প্রতিনিধি।।
ভোলার চরফ্যাশনে মোঃ নুর ইসলাম (নয়ন)নামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে বন-বিভাগের গাছ কর্তন করে সরকারি জায়গায় ইট-ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নুর ইসলাম নয়ন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি। এবং তিনি একই ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রবের ছেলে।
যুবলীগ নেতা নুরইসলাম ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় বসতি ভূমিহীন পরিবারগুলো। তাদের বসতি জায়গা থেকে উৎখাতের ভয়ভীতি দেখিয়ে এ ভাটা নির্মাণ করার পরিকল্পনা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সোমবার (৮ জানুয়ারী) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মাইনউদ্দির ঘাটের উত্তর পাশে চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-২ এর বেড়িবাঁধের জায়গায় বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের বসত ঘর ভেকু মেশিন দিয়ে ভাংচুর করে এবং ৫ কপাট বন-বিভাগের গাছ কেটে সরকারি প্রায় ২ একর জমির মাটি কেটে ইট-ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম (নয়ন)। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের বন ও কৃষি, এবং আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারগুলো কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় কান্না কন্ঠে মো. ইউনুস নামে একজন বলেন, এখানে ইট-ভাটা নির্মান না করার জন্য যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম নয়নকে বলি। সে আমাদের কথা না শুনে জোরপূর্বক গত বুধবার ৩ জানুয়ারি রাত ১০ দিকে একটি ভেকু মেশিন এনে বৃহস্পতিবার ভোর বেলা পর্যন্ত মাটি কাটে আমরা বাঁধা দিলে আমাদের ভয়ভীতি দেখায়। পরে আমরা স্থানীয় ৫ কপাট বন-বিট কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান'কে জানালে তিনি এসে মাটি কাটা বন্ধ করে ভেকু মেশিনটি জব্দ করেন। এরপর থেকেই ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম (নয়ন) বিভিন্ন ভাবে আমাদের বেড়িবাঁধের জায়গা ছাড়ার হুমকি দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ারও ভয়ভীতি দেখান তিনি।
স্থানীয় বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারী ভূমিহীন নুর ভানু সহ আরো কয়েকজন জানান, আমাদেরকে উৎখাত করে ইট-ভাটা নির্মান হলে আমরা কোথায় বসবাস করবো। এবং আমাদের কৃষি শস্য আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হবে জেনেও স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ইট-ভাটা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে নুর-ইসলাম নয়নকে। এইখানে ইট-ভাটা নির্মাণ হলে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। আর সব চাইতে বেশি ক্ষতি হবে আমরা যারা ভূমিহীন তাদের এবং কৃষকের ফসল উৎপাদনে।
ইট-ভাটা নির্মানের প্রস্তুতি নেয়া আওয়ামী লীগ নেতা নুর ইসলাম নয়ন বলেন, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ড বেড়িবাঁধের পাশে আমার ক্রয়সৃত্রে ৭ একর জমি রয়েছে। সেই জমিনে আমি ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বনবিভাগের গাছ কাটা ও ভূমিহীন বসতি পরিবারকে উৎখাত করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা ৫ কপাট বনবিট কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, বন-বিভাগের গাছ কাটায় একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম এর জিম্মায় রাখা হয়েছে। যারা জোরপূর্বক ভাবে বনবিভাগের গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। খুব দ্রুতই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) -২ এর প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেন জানান, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম ঘটনাস্থাল গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।