আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভুল বুঝাবুঝিতে নিজেদের তিন সেনাকে গুলি করে হত্যা করার পর ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়েছে ইসরাইল। এই ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে স্বয়ং দেশটির নাগরিকরা। ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে নিহতদের স্বজন ও সাধারণ নাগরিকরা। সেই সঙ্গে দাবি জানিয়েছেন, বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে।
দেশের ভেতরে চাপের মুখে তেল আবিব আবারও হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। এরিমধ্যে বন্দি বিনিয়ম নিয়ে হামাসের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে মাঠে নেমেছেন ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা- মোসাদের শীর্ষ কর্তা। কথা বলেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানির সঙ্গে।
উল্লেখ, গাজায় অভিযান চালানোর সময় ভুল করে তিন ইসরাইলি জিম্মিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর হাতে জিম্মি থাকা ওই তিনজনকে দূর থেকে হুমকি ভেবে সেনারা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান বলে দাবি করছে ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তারা।
এই ঘটনার খবর আসতেই না আসতেই, ইসরাইলি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে জিম্মিদের স্বজন ও সম্মিলিত ইসরাইলি জনগণ। বিক্ষোভকারীরা হামাসের সঙ্গে জিম্মিদের উদ্ধারে আবারও নতুন করে আলোচনা শুরুর চাপ প্রয়োগ করে তারা।
এতে সীমাহীন চাপে পড়ে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন সরকার। গাজা উপত্যকায়, জিম্মিদের পরিবারের চাপের মুখে হামাসের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে দখলদার ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নেয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে মোসাদ প্রধান ও কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। তবে টাইমস অব ইসরাইল বলছে, ইতিমধ্যেই দুজনের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বা কথা হয়েছে।
এই দুই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় জিম্মি বিনিময়ের প্রক্রিয়াটি জটিল এবং দীর্ঘ হতে পারে। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল হামাস ও ইসরাইল। যা মাত্র ৭ দিন স্থায়ী হয়। ওই সময় ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস।
তবে সাত দিন পর চুক্তি নবায়ন না করেই আবারও গাজায় বর্বর হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এতে করে জিম্মি বিনিময়ের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়ে। আর এই পরিস্থিতিতে ভুল করে নিজেদের সেনাকে গুলি করে হত্যা করে আরও বেকায়দায় পড়েছে নেতানিয়াহু।
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ওই সময় জানিয়েছিলো, তারা অভিযান চালিয়ে বাকি জিম্মিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। কিন্তু গেলো ১৬ দিনে দেশটি একজন জিম্মিকেও উদ্ধার করতে পারেনি। উল্টো আইডিএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তিন জিম্মি। এতে করে সীমাহীন চাপে পড়ে তেল আবিব।
একই সময়ে হামাসও হুশিয়ারী দিয়ে বলেছিলো, গায়ের জোরে বা সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে একজন জিম্মিকেও উদ্ধার করতে পারবে না ইসরাইল। গেলো ১৬ দিনে কার্যত সেটাই পরিস্কার হয়ে উঠলে, ইসরাইলি নাগরিকরা সরকারকে আবারও হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরুর জন্য চাপ দিতে শুরু করে।
এদিকে, আইডিএম প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে তিন জিম্মি খালি গায়ে ছিলেন। তারা সাদা পতাকা নিয়ে হাত নাড়লেও, ইসরাইলি সেনারা তাদেরকে হামাস ভেবে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তিন জন। কী করে এমনটি ঘটলো, সেটিও জানার চেষ্টা করছে আইডিএফ।