প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়নের ঘরে যাতায়াতেও ঘটছে ব্যঘাত, দ্রুত সমাধানের আশ্বস কতৃপক্ষের।

দেবদুলাল চক্রবর্ত্তী, মৌলভীবাজার।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ডুলুছড়া এলাকার বালিশিরা পাহাড় ব্লকের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে পোহাতে হয় নানা চড়াই উৎরাই। কখন লাফ দিয়ে, কখনও জঙ্গলমারিয়ে, গাছের চাড়ে, আবার পাহাড়ী ছড়ার পানি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের।

প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া এ যেন যুদ্ধ জয় করা। আর প্রবল বৃষ্টিতে ছড়ায় গোলা আসলে সেদিন স্কুল কামাই করা ছাড়া গতান্তর নেই। অন্যদিকে একই রাস্তার উপরিভাগ ভাঙ্গা থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়নের ঘরে যাতায়াতেও ঘটছে ব্যঘাত।

এ চিত্রটি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুলুছড়া এলাকার পাহাড় ব্লকের শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষার্থী নয় এই গ্রামের মানুষকেও কষ্ট করে এ পথ দিয়ে যেতে হয় শহরে বা তাদের জুমে। ওই ভঙ্গুর পথই এখানকার অসংখ্য লেবু, আনারসসহ অনান্য ফসলাদি পরিবহনে একমাত্র রাস্তা।

এর সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প দুই এর ১১৩টি বাড়ি। এই বাড়িতে বসবাস করা মানুষদেরও চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। তাদের সন্তানদেরও ভর্তি করতে হবে ডলুছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সোমবার সরজমিনে প্রথম বুলেটিন টিম সেখানে গিয়ে দেখা যায় একদল শিশু ওই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। আশ্রায়নের পাশে রাস্তাটির তিনটি ভাঙ্গন। একটিতে একটি গাছের টুকরা দিয়ে এপার ওপাড় সংযোগ।

ওই ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মনি আক্তার। ছেলেরা হাতল ছাড়া ওই গাছ দিয়ে পাড় হলেও মনি ভয়ে পাড় হচ্ছে না। পরে ইয়াছিন, রুহিন ও হাসিবুল আবার অপর প্রান্থে গিয়ে মনিকে ধরে ধরে শুরু গাছ দিয়ে এই ভাঙ্গা পাড় করে।

এ সময় প্রথম বুলেটিনের সাংবাদিক দেখে ছুটে আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা। তিনি জানান, এই রাস্তা এখানে কি দেখছেন একটু কষ্ট করে সামনের অবস্থাটা দেখে আসুন।

মাসুদ রানার অনুরোধে কোমলমতি এই শিশুদের সাথে আমিও পথ ধরি স্কুলের। কিছুক্ষন পর দেখা মিলল এরকম আরো একটি ভাঙ্গন। সেখানেও গ্রামবাসী এমন বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন। এর পর ছড়ার পাশ দিয়ে সরু সড়ক দিয়ে কিছুক্ষন যাওয়ার পর নেমে যেতে হয় পাড়ারি ছড়ায়।

ছড়ার পানি মারিয়ে প্রায় দেড়শত গজ অতিক্রম করে আবার ডাঙ্গায় উঠতে হয়। ডাঙ্গায় পায়ে হাঁটার পথও সরু। পাশেই ডুলছড়া ত্রিপুরা পল্লীর শশান।

এই সরু পথের দু পাশ ঘন জঙ্গলে আবৃত। কোথাও কোথাও ঘাসে ও আগাছায় রাস্তা দেখা যায়না। এই রাস্তা দিয়ে সামনে এগুতে আমার অনেকটা ভয় ভয় লাগছিল। নিচে কি আছে দেখা যাচ্ছে না।

এরই মধ্যে পেছনে আসা মাসুদ মিয়ার পায়ে দুটি জোঁক কামর বসিয়েছে। অথচ এই রাস্তা দিয়েই ছোট ছোট শিশুরা মনের আনন্দে স্কুলে যায়।

তাদের সাথে ডলুছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত যাই। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলে পৌছায় তাদের মনে সে কি আনন্দ।

এ ব্যাপারে প্রথম বুলেটিনের জেলা প্রতিনিধির কথা হয় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অজুন দত্তের সাথে। তিনি জানান, তাদের বিদ্যালয়ে যারা পড়েন তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ী জনবসতির শিক্ষার্থী।

বর্তমানে বিদ্যালয়ের তিন দিকের রাস্তা ভালো শুধু ডুলুছড়া যে অংশে মুসলিম বসতি রয়েছে (পাহাড় ব্লক) সে পাশে রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে খুবই কষ্ট হয়। তিনি জানান, পশ্চিম পাশের রাস্তা হলে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি আরো বাড়বে।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাহিন মিয়া জানায়, প্রতিদিনই তাদের এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। প্রায় সময় পড়ে গিয়ে কাপড় ও বইপত্র ভিজে যায়।

৩য় শ্রেণীর ইয়াছিন জানায়, স্কুলে আসার পর ছড়ার গোলা আসলে সিএনজিতে করে লাউয়াছড়া রাস্তায় ঘুরে বাড়ি যেতে হয়।

গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা আরো জানান, এই পাহাড়ী জনবসতির সন্তানদের স্কুলগামী করতে হলে এই রাস্তাটি সংস্কার ও পাকা করা জরুরী।

তিনি বলেন, বাচ্চাদের এখন স্কুলে দিতে ভয় হয়। শুধু এই রাস্তার কারনে। মাঝে মধ্যেই এই রাস্তার দু পাশে ঘাস মারার স্প্রে করেন। কিন্তু কিছুদিন মরা থাকলেও তা আবার হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে লেবু বাগানের মালিক শ্যামল দাশ জানান, রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় তার বাগানের লেবু আনারস শহরে পাঠানো খুবই কষ্ট কর। এখন ডাবল খরচ বহন করতে হয়। এ জন্য তিনি লেবু আনারস চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এ ব্যাপারে আশ্রায়নে ঘর পাওয়া রুনা বেগম জানান, তার স্বামী রিক্সা চালান। এখানে রাস্তাযদি ভালো না হয় তাহলে তো তার স্বামী রিক্সা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে আসতে পারবেনা।

একই কথা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়া সালমা বেগম প্রথম বুলেটিনকে তিনি জানান, আমাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তা নেই। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে যেতে হলেও রাস্তা ভাঙ্গা।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি সন্দ্বীপ তালুকদার জানান, এখানে আশ্রায়নের ১১৩টি ঘর দেয়া হয়েছে।

বর্ষায় এই রাস্তাটির কয়েক জায়গায় ভেঙ্গেছে। বর্তমানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত এই রাস্তাটি করে দেয়ার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে, ইতিমধ্যেই এর প্রস্তাব উপরে পাঠানো হয়েছে। এখানে কালভাটসহ আরসিসি ঢালাই দিয়ে রাস্তা হবে বলে তিনি প্রথম বুলেটিনকে জানান।
দেবদুলাল চক্রবর্ত্তী, মৌলভীবাজার।
০১৭১৮-১০০০০২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *