এম এ আহমেদ আরমান , হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীর মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে পরিচালকের যোগসাজশে দালালদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিলছে না কাঙ্খিত সেবা, পদে পদে হয়রানি হচ্ছে গ্রাহকেরা।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় কার্যালয়ে বিভাগীয় পরিচালক হিসেবে মোঃ সাইদুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে চিহ্নিত দালাল চক্রের নতুন কর্মসংস্থান। বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহক বা সেবা প্রার্থীদের প্রবেশ করতে হলে মূল গেইটে জনৈক বহিরাগত লোকের কাছে থাকা রেজিষ্টারে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও কি কারণে এসেছে তা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করতে হয়। কিন্তু দালালদের প্রবেশে কোন ধরণের বাধা নেই কিংবা রেজিস্টারে তাদের নাম-ঠিকানাও লিখতে হয়না। পরিচালকের নির্দেশনায় তার বাসভবনের সিড়িঁ সংলগ্ন নীচ তলার ১০৭ নম্বর কক্ষে বহিরাগত দালাল দিয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্রগুলোর ‘বিশেষ চিহ্ন’ বাছাই করার কাজে কয়েকজনকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ে অফিসের কতিপয় কর্মচারী তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেবাপ্রার্থীরা তাদের কোন প্রয়োজনে পরিচালকের সাথে দেখা করতে চাইলে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং দূর্ব্যবহারের শিকার হন। সরেজমিনে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্রমতে, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মোঃ সাইদুল ইসলামের সাথে দালালদের অঘোষিত চুক্তি (টাকার বিনিময়ে) থাকার কারণে তাদের মাধ্যমে জমাকৃত ‘বিশেষ চিহ্নিত’ পাসপোর্ট আবেদনের ফাইলগুলো খুব দ্রæততার সাথে হালনাগাদ করা হয়। দালালদের ‘বিশেষ চিহ্ন’ ব্যতীত ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িঁয়ে থেকে কিছু সাধারণ গ্রাহক তাদের পাসপোর্ট আবেদন জমা করলেও সেগুলো দৈনিক হালনাগাদ করা হয়না বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন শেষে ‘বিশেষ চিহ্ন’ ব্যতীত আবেদনগুলো সাবমিট না দিয়ে আলাদা করে রেখে দেয়া হয়। জরুরী পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কিছু কিছু সাধারণ গ্রাহক রি-ইস্যু পাসপোর্ট আবেদন করার পর অনলাইনে চেক করে যখন বুঝতে পারেন যে আবেদন হালনাগাদ করা হয়নি তখন প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের তারিখ অনুযায়ী পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলে তারা জানতে পারেন, পরিচালকের নির্দেশে কর্মচারীরা আবেদনগুলো সাথে সাথে আপলোড না দিয়ে ১০-১২ দিন বিলম্বে আপলোড দেয়ায় যথাসময়ে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য সিটিএসবি বা ডিএসবিতে প্রেরণেও গড়িমসি করার কারণে তারাও নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভূক্তভোগী গ্রাহকেরা এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করলে পাসপোর্ট পাইতে আরও ১৫/২০ দিন সময় লাগতে পারে বলে তারা জানান। অথচ দালাল চক্রের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট আবেদন জমা করলে নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে বলেও একজন ভূক্তভোগী জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিচালকের নির্দেশনায় তার বাসভবনের সিড়িঁ সংলগ্ন নীচ তলার ১০৭ নম্বর ও ২য় তলার ২০৭ নম্বর কক্ষে বহিরাগত দালাল দিয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্রগুলোর ‘বিশেষ চিহ্ন’ বাছাইপূর্বক ফাইলগুলো আলাদা করে রাখার কাজে মোঃ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ বেলাল, মোহাম্মদ সেলিম ও অনিকসহ আরও কয়েকজন ব্যস্ত থাকেন। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ে পরিচালকের একান্ত আস্থাভাজন অফিস সহকারী মোঃ সাইফুদ্দিন, উচ্চমান সহকারী মোঃ জসিম উদ্দিন, সুপার শওকত আলী মোল্লা ও হিসাব রক্ষক মোঃ সুমন তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন বলে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ। এছাড়া কোন কোন কর্মচারী পরিচালকের আদেশ/নির্দেশ মানতে অনীহা প্রকাশ করলে মহাপরিচালকের (ডিজি) ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদেরকে বদলী করানোর হুমকি দেয়া হয় বলে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ।
সূত্রমতে, মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সামনে একটি ব্যাংক বুথ ছাড়া আশপাশে আগে থেকেই আর কোন ধরণের দোকানপাট ছিলনা। বর্তমান সময়ে অফিসের আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ভাসমান দোকান। অপেক্ষমান আবেদনকারীরা যে কোন প্রয়োজনে নির্দিষ্ট দালালের কাছে যাওয়ার জন্য ঐসব দোকানীরা উদ্বুদ্ধ করে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোঃ সাইদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালালচক্রের আধিপত্য বিস্তারের বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ তদন্তকালে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে জানান ভূক্তভোগী সেবা প্রার্থীরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম ও গ্রাহক হয়রানি রোধসহ দালালমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দপ্তরের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
Leave a Reply