মোঃ বিপ্লব হোসেন (টাঙ্গাইল) জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সাগরদীঘি এলাকার কৃষক আজমত মিয়া | ৮ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি। তাঁর কাছে শিমের বাজারদর জানতে চাইলে শুনিয়ে দিলেন লালনের গান ‘সময় গেলে সাধন হবে না’।
তাঁর ভাষ্য, গত বছর এই দিনে শিম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ থেকে দেড়শ টাকায়। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০
টাকায়। এখন ভালো দাম না পেলে কিছু দিন পর তো শিম গরু-ছাগলেও খাবে না। কিছু দিন পর /
তাঁর অভিযোগ, হরতাল-অবরোধের কারণে সবজির দাম কম দিচ্ছেন পাইকাররা।
আজমত মিয়ার মতো ঘাটাইল উপজেলার অনেক সবজি চাষির কপালে এখন চিন্তা। লাভ নয়, খরচ উঠবে কিনা– তাই ভেবেই মাথায় হাত তাদের। সকল কৃষকদের
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর ঘাটাইলে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এসব সবজির ফলনও হয়েছে ভালো। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় শিম এবং বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সবজি চাষিরা জানান, ফলন ভালো হলেও জুটছে না সবজির ভালো দাম। কারণ হিসেবে তারা দায়ী করলেন চলমান হরতাল-অবরোধকে।
মনতলা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এবার ছয় একর জমিতে শিম চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। গত বছর এই দিনে শিমের পাইকারি দর ছিল প্রতি মণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু এবার বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।’ পাইকাররা নাকি জানিয়েছেন হরতাল এবং অবরোধের কারণে ঢাকায় সবজি বিক্রি হচ্ছে না।
হেলাল জানান, আর কিছুদিন পর এমনিতেই সবজির দাম কমে যাবে। পড়তে হবে লোকসানের মুখে।
কৃষক হযরত আলীর ভাষ্য, এভাবে চলতে থাকলে সবজি চাষে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। হরতাল-অবরোধ আর না দিলে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
গারোবাজার এলাকার বেগুন চাষি নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারি ৩২০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বেগুন। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৮ টাকা। তবুও পাইকাররা নিতে চান না। অনেক বেগুন খেতেই পচে যাচ্ছে।’
ঘাটাইল উপজেলার সবজির এলাকা হিসেবে খ্যাত সাগরদীঘি, জোরদীঘি, মনতলা, সানবান্ধা, ফুলতলা, গারোবাজার, সিদ্দিখালী ও বাঘারা। মৌসুমি বিভিন্ন ধরনের সবজি ভরে এই এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৮টি ট্রাক রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সবজি ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, হরতাল এবং অবরোধের কারণে ঢাকায় বাজারদর কম। তাই স্থানীয় বাজারেও সবজির দাম কমে গেছে।
শামসুল হক নামে আরেক ব্যবসায়ীর দাবি, যানবাহন চলাচলে এখনও কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাদের। তবে অবরোধের কারণে গাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে। তাই সবজির দামও কমে গেছে।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, যাতায়াত এবং পরিবহন ব্যবস্থায় কৃষিপণ্য বাধা পেলে কৃষক অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁর জানা মতে এর পরও পাইকাররা দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজার ধরতে ঝুঁকি নিয়ে সবজি পাঠাচ্ছেন।