শিরিন শারমিন নিজস্ব প্রতিবেদক প্রথম বুলেটিন
নাজিমুদ্দিন আইয়্যুব। তিনি একটা লম্বা সময় পর্যন্ত অবিবাহিত ছিলেন। তার ভাই আসাদুদ্দিন তাকে একদিন প্রশ্ন করলেন, হে ভাই! তুমি কেন বিবাহ করছো না? নাজিমুদ্দিন তাকে বললেন, আমি আমার জন্য উপযুক্ত কাউকে পাইনি।
আসাদুদ্দিন বললেন, আমি কি তোমার জন্য একটি প্রস্তাব দিব? নাজিমুদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন, কার ব্যাপারে প্রস্তাব রাখতে চাচ্ছেন?
আসাদ উদ্দিন বললেন, সেলজুক সাম্রাজের বাদশার রাজকন্যা অথবা প্রধান ওজিরের কন্যার ব্যাপারে বলছি।
নাজিমুদ্দিন বলেন, তারা কেউই আমার যোগ্য নয়। এই কথা শুনে তার ভাই আশ্চর্য হলেন এবং জিজ্ঞাস করলেন, তাহলে কে তোমার উপযুক্ত? নাজিমুদ্দিন উত্তর দিলেন,
” আমি একজন সালিহা জীবনসঙ্গিনী কামনা করি, যে আমাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর তার গর্ভ থেকে আমার ঘরে এমন এক সন্তান জন্ম নিবে, যাকে সে উত্তমরূপে প্রতিপালন করবে। আমাদের সন্তান যুবক বয়সে উপনীত হবে। সে হবে সুদক্ষ অশ্বারোহী। সে-ই বাইতুল মাকদিসের স্বাধীনতা উম্মাহর কাছে ফিরিয়ে আনবে।”
আসাদুদ্দিন এবার আর আশ্চর্য হলেন না। তিনি জিজ্ঞাস করলেন, তুমি এমন মেয়ে কোথায় পাবে? নাজিমুদ্দিন বললেন, যে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে নিয়ত রাখে, আল্লাহ তাকে দান করেন।
তারপর কোন একদিন নাজিমুদ্দিন তিকরিত ( ইরাকের একটি শহর) এর কোন এক মসজিদে একজন শাইখের মজলিসে ছিলেন। এমন সময় একজন যুবতী এসে দেয়ালের আড়াল থেকে ঐ শাইখকে ডাকতে লাগলেন। ঐ শাইখ নাজিমুদ্দিন থেকে অনুমতি নিয়ে যুবতীর ডাকে সাড়া দিলেন। মসজিদের শাইখ যুবতী মেয়েটিকে বলল, তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য বাড়িতে যেই ছেলেটিকে পাঠিয়েছিলাম, তাকে ফিরিয়ে দিলে কেন? যুবতী উত্তর দিল, শাইখ! ছেলেটি মর্যাদা আর সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে উত্তম হলেও আমার জন্য উপযুক্ত না। শাইখ বলল, তাহলে তুমি কেমন ছেলে চাও? যুবতী মেয়েটি উত্তরে বলল,
” আমি এমন একজন যুবককে কামনা করি, যিনি আমাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আর আমার গর্ভে তার এমন এক সন্তান জন্ম নিবে, যে হবে অভিজ্ঞ অশ্বারোহী। সে বাইতুল মাকদিসকে মুসলিম উম্মাহর অধীনে ফিরিয়ে আনবে। ”
আল্লাহু আকবার! হুবহু এই কথাটাই তো নাজিমুদ্দিন তার ভাইকে বলেছিল। নাজিমুদ্দিন সৌন্দর্য আর মর্যাদার অধিকারী অনেক মেয়েকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এই মেয়েও এরকম অনেক ছেলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। আবার তাদের উভয়ের উদ্দেশ্যও এক।
নাজিমুদ্দিন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি দাঁড়িয়ে গিয়ে শাইখকে ডেকে বললেন, শাইখ! আমি এই মেয়েকে বিবাহ করতে চাই। শাইখ বললেন, আরে এই মেয়ে গ্রামের সবচেয়ে দরিদ্র ঘরের সন্তান। নাজিমুদ্দিন বললেন, এটাই সেই মেয়ে যাকে আমি কামনা করি।
নাজিমুদ্দিন সেই মেয়েকে বিবাহ করলেন। তাদের ঘরে একজন সন্তান জন্ম নিল। সেই সন্তান মহান বীর যোদ্ধা হয়ে বাইতুল মাকদিসকে মুসলিমদের অধীনে ফিরিয়ে আনলেন। তিনিই হলেন সালাউদ্দিন আইয়্যুবি রহিমাহুল্লাহ।
এটাই আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের সন্তানদের এই শিক্ষাই দেয়া উচিত।
(আলি সাল্লাবি হাফিজাহুল্লাহর পোস্ট থেকে অনুদিত)
Leave a Reply