এবার নিউইয়র্কএ ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন এবং আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’য় নানা রকমের অবিশ্বাস্য সমস্ত ঘটনা ঘটেছে।

মোঃ নুরুজ্জামান নয়ন নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

আমি একজন সামান্য জাদুশিল্পী মাত্র। তরুণ বয়সে ১৯৭১ সালে রাইফেল হাতে যুদ্ধ করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মদানে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল।

কিন্তু আমার কথা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হলভর্তি দর্শক পিন-পত্তন নিস্তব্ধতা, কখনো অট্ট হাসিতে এবং প্রচন্ড হাততালিতে ছাদ ফাটিয়ে ফেলার মত পরিস্থিতি তৈরি করলেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এতো ভালোবাসা আমি কোথায় রাখি!

বক্তৃতাশেষে অডিটরিয়ামের মঞ্চ থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে আসছি। আমার সামনে পেছনে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মত নানান বয়সী মানুষের মিছিল।

সবার ভুয়সি প্রশংসায় আমি বিহ্বল হয়ে পড়লাম। কেউ কেউ ফটো তুলছেন। কেউ সেলফি তুলতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ আমাকে রক্ষা করার জন্য ভলান্টিয়ারের মতো এগিয়ে এসেছেন।

এই সময় হঠাৎ একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এলেন। হলুদ শাড়ি পরা। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। আমার মুখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দাড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্না মানুষ। খুবই দৃঢ়।

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমায় সুদৃঢ় উচ্চারণে বললেন, “আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি,” তাঁর এই ব্যক্তিত্ব এবং কথা বলার আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি আশেপাশের সবাইকে থামিয়ে দিল।

তিনি আরো বললেন, “আপনি আমার বাংলাদেশ”। মুহূর্তে একদম মায়ের মত আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তাঁর কান্না আর থামছেনা। আমি পরম শ্রদ্ধায় তাঁর মাথায় এবং পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।

ধীরে ধীরে তাঁর কান্না থেমে এলো। আশেপাশের লোক কাছে এসে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁকে এবং আমাকে দেখতে লাগলেন। এমন দৃশ্য এর আগে আমি এবং তাঁরা কেউই কখনো দেখিনি বা দেখেননি।

আমি তারপরে যা কিছুই করেছি সবটা জুড়ে মায়ের মত এই ভদ্রমহিলা আমার সমস্ত সত্তাকে আবিষ্ট করে রাখলেন।

হোটেলে গেলাম কিছুতেই আর ঘুম পাচ্ছিলনা। সারাটা রাত সেই স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ। অথচ এই ব্যক্তিত্বসম্পন্না ভদ্রমহিলা আমাকে কোথায় তুলে দিলেন!

আমি কি সত্যিই এর যোগ্য? এই প্রশ্ন শুধু সেই রাত নয়, পরের দিন নয়, এখন পর্যন্ত আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *