সৈয়দ শাহানা আক্তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
প্রথম বুলেটিন
১। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, বদ্বীপ পরিকল্পনা সহ রাষ্ট্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রার অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে টেকসই নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য অহর্নিশ দিবারাত্র কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। সম্মানিত নাগরিকদের জানমাল, আইনী প্রতিকার, অপরাধ দমন ও নিবারন সহ বহুমাত্রিক কাজে নানাবিধ উপায়ে আইনের আলোকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।
২। এরই ধারাবাহিকতায় বাদী খয়বার আলী জানান গত প্রায় ০৪ দিন যাবত আমার মায়ের মোবাইল ফোনে ফোন করে আল্লাহর অলী দরবেশ পরিচয় দিয়ে সালাম- কালাম করে বলে মা তোর ভাগ্যে বহু ধন-রত্ন দেখা যাইতেছে তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করতেছিস। আমাকে তোর কাছে আল্লাহ তার দরবার থেকে পাঠাইয়া দিয়ে তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ (০৭ রাজার ধন) আল্লাহর নির্দেশে ৭০০ জন জ্বীন পাহাড়া দিতেছে এই ধন-সম্পদ তুই যদি পাইতে চাস, তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে। এইভাবে উক্ত আল্লাহর অলী, দরবশে সেজে উক্ত ব্যক্তি আমার মায়ের সাথে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে মোবাইলে কথা বলতে থাকে এবং আমার মাকে মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাতে থাকে। তখন আমার মা সেই আল্লাহর অলী, দরবেশ হিসেবে দাবি করা ব্যক্তিকে জানায় যে কোরআন শরীফ, জায়নামায, টুপি আমি কোথায় দিবো। তখন আল্লাহর অলী দরবেশ আমার মাকে জানায় যে, বিকাশে ১০০০/- (এক হাজার) টাকা পাঠাইয়া দিলে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ, টুপি তোর নামে আল্লাহর দরবারে পৌঁছিয়ে দিবো। আমার মা ধর্ম ভিরু ও গ্রামের সহজ সরল বৃদ্ধ মহিলা হওয়ায় উক্ত আসামীর কথায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সরল বিশ্বাসে উক্ত ঘটনার ০১ দিন পরে আমার মা গুপ্ত ধন-সম্পদ প্রাপ্তির আশায় উক্ত আসামীর দেওয়া বিকাশ নম্বরে স্থানীয় এজেন্টের বিকাশ নাম্বার থেকে পর্যায়ক্রমে ০২ বার ৪০০০/- (চার হাজার) টাকা বিকাশ করে। আল্লাহর অলী দরবেশ সেজে উক্ত প্রতারক আসামী আমার মাকে আরো বলে যে, মা তুই গুপ্ত ধন-সম্পদ পাইতে চাইলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু র্স্বণের গহণা দিতে হবে আমার মাকে আরো বলে যে, একটি মাটির খালি পাতিলে চাল রাখিয়া একটি ঢাকনা সহ সাদা কাপড় দ্বারা বেধে তোর ঘরের গোপন জায়গায় রাখে দে। মা তুই ও তোর স্বামী জায়নামাজের উপর নফল নামাজ আদায় কর। উক্ত পাতিল আমি না বলা র্পযন্ত খুলবি না। আমার মা দরবেশের কথামত উক্ত পাতিলটি ঘররে গোপন জায়গায় রেখে দেয়। এরপর দরবশ আমার মাকে ভূরুঙ্গামারী থানাধীন চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নে নতুন হাট বাজারের ঈদগা মাঠ সংলগ্ন মাদ্রাসার মাঠে গাছে নিচে গহনাপত্র রুমালে বেধে রাখতে বলে এবং পিছনে তাকাতে নিষেধ করে। তাকালে আমার মায়ের অমঙ্গল হইবে মর্মে ভয়ভীতি দেখায়। আমার মা তাহার কথামত গুপ্ত ধন-সম্পদ পাওয়ার আশায় গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ তারখি সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬.০০ ঘটিকার সময় উক্ত স্থানে যায়। উক্ত স্থানের আশেপাশে উক্ত ব্যক্তি সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করায় পরবর্তীতে গ্রাম পুলিশসহ কয়েক জন লোকের নিকট উক্ত আসামীর ঘোরাফেরা সন্দেহ জনক মনে হইলে স্থানীয় আরো কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার নাম ঠিকানা একেক সময় একেক ঠিকানা বলে। পরবর্তীতে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মাড়িয়া গ্রামের মোঃ আঃ রশিদ (৪০) কে গ্রেফতার ও তার হেফাজত থেকে ০১ টি র্স্বণ রংয়ের পিতলের মূর্তি ও ০১ টি পুরাতন ফাইভ স্টার বাটন মোবাইল উদ্ধার করে এবং ধৃত আসামীর নিকট থেকে পিতলের ০১ টি মূর্তি সম্পর্কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় যে, ভিকটিম মোছাঃ খয়ের জান (৬৮) কে র্স্বণের রংয়ের উক্ত পিতলের লক্ষি মূর্তিটি দেখিয়ে র্স্বনের মুর্তি হিসাবে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য উক্ত জ্বীনের বাদশা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা হতে চর ভূরুঙ্গামারী এসেছিল। পরবর্তীতে উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে ভূরুঙ্গামারী থানার একটি চৌকশ টিম। উক্ত প্রতারক নানাকন্ঠে নানাভাবে অসংখ্য মহিলাকে ভুলভাল বুজিয়ে অনেক প্রতারনা করেছেন মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ রুহুল আমীন বলেন, গ্রেফতারকৃত নিজেকে জ্বীনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মোঃ আঃ রশীদ বিভিন্ন জেলার সম্মানিত নাগরিকের গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিলো। এই সব বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার সম্মানিত নাগরিকদের আরো সতর্ক হওয়ার এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটলে জেলা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।
৩। কুড়িগ্রাম জেলায় সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের লক্ষ্যে ও সম্মানিত নাগরিকদের টেকসই নিরাপত্তার নিমিত্তে সদা জাগ্রত কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ।