মো: আলমগীর হোসেন বিশেষ প্রতিনিধি তারাকান্দার ময়মনসিংহ মোবাইল:০১৯১৭৩৩৮৪১৮
দুদিন পর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ট্রেন চলাচল। এদিন ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বিশেষ সে ট্রেনটি ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রথমবার ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার দিকে যায় এ ট্রেন। আরও কয়েকবার চলবে এ ট্রায়াল।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে প্রথম দিন বিশেষ এ ট্রেনটি ফরিদপুর রেলস্টেশন অতিক্রম করে। পরে ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া প্রান্তে গিয়ে পৌঁছায়।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ রেলপথ বাণিজ্যিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনটিতে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন সেই বিশেষ ট্রায়াল ট্রেনটি পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার দিকে গেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: এক নজরে পদ্মা সেতু প্রথম বুলেটিন এ
এর সত্যতা নিশ্চিত করে রেলের পাকশী ডিভিশনের গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) মো. রুহুল কাদের আজাদ বলেন, শুক্রবার বিশেষ এ ট্রেনটি পাকশী থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ১৩টি বগিবিশিষ্ট ও দুটি পাওয়ার ইঞ্জিন সম্বলিত। বিশেষ এ ট্রেনটিতে চড়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিশেষ এ ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে ১০ অক্টোবরের আগে আরও বেশ কয়েকবার পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করবে, যা ট্রায়ালের একটি অংশ।
গত বছরের জুনে পদ্মা সেতু চালুর এক বছর দুই মাস পর আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ট্রেন চলাচল। এদিন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হবে। আগামী বছর জুনে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা।
পদ্মা সেতু দিয়ে ছুটবে ট্রেন, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বছরের ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। বাকি ছিল রেল যোগাযোগ। সেই জল্পনা-কল্পনারও অবসান ঘটছে আগামী ১০ অক্টোবর। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যোগ হচ্ছে নতুনমাত্রা।দিন যতই এগোচ্ছে তাদের ভেতর আনন্দ আর উদ্দীপনা ততই বাড়ছে।
জানা গেছে— পদ্মা সেতু চালুর এক বছর দুই মাস পর আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। ওই দিন নতুন এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে ১০ অক্টোবর। এছাড়া আগামী বছরের জুনে যশোর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।
ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নতুনমাত্রা যোগ হবে। এদিকে, পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা।
পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কথা হলে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মো. এনায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নপূরণ করেছে। জীবনযাত্রার মানসহ নানা দিক দিয়ে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কয়েকদিন পরেই রেল চলবে। অনেক আনন্দ লাগছে, গর্ব হচ্ছে।
ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন বোয়ালমারী পৌরসভার সোতাশি গ্রামের বাসিন্দা নাহিদ খান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল তথা ফরিদপুরের মানুষ। তবে, সড়কপথে বাসে ঢাকায় যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া লাগে। সেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় নিরাপদে ঢাকায় যাওয়া যাবে। এটি সব শ্রেণির যাত্রীর ক্ষেত্রেই বড় প্রভাব ফেলবে। সর্বস্তরের মানুষ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ সুবিধার পাশাপাশি সবক্ষেত্রে লাভবান হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে মধুখালী উপজেলার বাসিন্দা ও সানভ্যালী পার্ক অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ উজ্জ্বল বলেন, এলাকায় ও ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। ফরিদপুর-মধুখালী-ঢাকায় সপ্তাহে দুই তিনবার যাতায়াত করতে হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবক্ষেত্রে জীবনমানের পরিবর্তন হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের একটি নয় কয়েকটি স্বপ্নপূরণ হয়েছে।
ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা কামরুজ্জামান হীরা বলেন, এখন দিনে প্রায় দুইবার ফরিদপুর-ঢাকা যাওয়া আসা যায়। ট্রেন চালুর পর সড়কপথে যাত্রা আরও সহজ হবে। ট্রেন চালুর খবরে খুব ভালো লাগছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
ভাঙ্গা বাজারের কাঁচামালের আড়তদার ব্যবসায়ী হারুন শেখ বলেন, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনে ভাঙ্গায় আসে। ভোক্তা পর্যায়ে সেই পণ্যই বিক্রি হয় প্রায় দ্বিগুণ দামে। এর পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাপক সফলতা মিলবে। এতে মানুষ খুশি ও আনন্দিত।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরুর পর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুযোগ। এ অঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখন অর্ধেক খরচে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবেন। যা তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি কমবে শিক্ষার খরচ। জিনিসপত্রের দামেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার তাকবীর হোসেন বলেন, এ রুটে ক’টি ট্রেন চলবে, যাত্রীপ্রতি ভাড়া কত হবে। এখনো আমাদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। তবে, অনুমান অনুযায়ী, ঢাকা-ফরিদপুর জনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকার মতো ভাড়া হতে পারে। কারণ, ফরিদপুর থেকে রাজশাহী চলাচলকারী মধুমতী এক্সপ্রেসে আড়াইশ কিলোমিটারের ভাড়া ২৫০ টাকা। ঢাকা-ফরিদপুর রেল দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এরই মধ্যে ট্রেন চালুর খবরে মানুষ নতুন পরিকল্পনার স্বপ্ন বুনছে। এমন খবরে আনন্দিত, উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত সর্বস্তরের মানুষ।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর এবার রেল নিয়ে নতুন পরিকল্পনার স্বপ্ন বুনছে। দক্ষিণের মানুষ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথে ঘরে ফিরবে। রেল ভ্রমণ সবসময়ই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। শুধু যাত্রী নন, পণ্য পরিবহনেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকবেন রেলপথে।
তিনি আরও বলেন, ট্রেন চালুর পর সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ সুবিধার পাশাপাশি সবক্ষেত্রে লাভবান ও সুফল ভোগ করবেন। বাঁচবে অর্থ, বাঁচবে সময়। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিসর। ফলে দক্ষিণাঞ্চল তথা ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত।