today visitors: 5073432

বগুড়ায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে আইনজীবী সহকারীর মৃত্যু

বগুড়া থেকে, এস.এম.জয়

৪ই অক্টোবর /২৩ইং(রোজ- বুধবার)

বগুড়ায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬) নামে এক আইনজীবী সহকারী (মুহুরি) মৃত্যু হয়েছে।মুহুরি হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, ডিবি পুলিশের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৩ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে জেলা ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে। হাবিবুর রহমান বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পেশায় তিনি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী সহকারী ছিলেন ও জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক।

বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। মৃত হাবিবুরের মামা ও আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোষাকে বিনা ওয়ারেন্টে হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজ করতে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কাছে একাধিকবার ধর্ণা দিয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি৷ পরে এক সিনিয়র আইনজীবী আমাকে নিশ্চিত করেন হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছে। তার কিছুক্ষণ পরে তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে হাবিবুরের নিথর দেহ দেখতে পাই।

আইনজীবী মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, হাবিবুর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সারাদিন সুস্থভাবে কাজ করা মানুষটা আটকের পরে হুট করেই মারা গেল? তাকে ডিবি পুলিশের শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ডিবি পুলিশের দায়িদের বিচার চাই।

বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। ৪ আগস্ট গ্রামের একটি পুকুরে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশের দুই পা বিচ্ছিন্ন করা হলেও লাশ উদ্ধারের সময় একটি পা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে একই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেওয়ার বিচ্ছিন্ন একটি পা উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে বিপুল হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন খুকি বেওয়া।

এ- বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে কার্যালয়ে আনার পরপরই তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও যদি কারও সন্দেহ থাকে লাশ ময়নাতদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।

এ- বিষয়ে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সন্ধ্যার ৭ টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
তবে দেহে অক্সিজেনের মাত্র কমে এসে রাত পৌনে ৯ টার দিকে হাবিবুরের মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *