today visitors: 5073432

তলিয়েছে রাজশাহী নগরী – প্রবল বৃষ্টিপাতে নির্ঘুম রাত পোহাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ

রহিদুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহীঃ

রাজশাহীতে প্রবল বৃষ্টি পাতের কারবে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গতকাল বুধবার রাত ১০ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চলা বৃষ্টি এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টানা ৯ ঘন্টার বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাট তোলিয়ে গেছে রাজশাহী মহানগরীর। চলতি বছরের এই প্রথম সর্বোচ্চ ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে।

এতে নগরীর নিচু-উচু সব এলাকায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। পানি ঢকে পড়েছে বাসা বাড়িতেও। এতে যানবাহনের পরিবর্তে লোকজনদের নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। নগরীর উপশহর, উপশহরের উপকণ্ঠ, জিরোপয়েন্ট, লক্ষীপুর, ভদ্রা, ভাটাপাড়া, বিনোদপুরের নিম্নাঞ্চল, নওদাপাড়া এলাকায় জলাবদ্ধাতার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত শহরের মুল পয়েন্টগুলোতেই বেশি জলাবদ্ধা দেখা গেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, গতকাল বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তিনি বলেন, আরো তিন থেকে চারদিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভবনা নেই। এটি এবছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলেও জানান তিনি।

দেখা গেছে, ভারি বৃষ্টির কারণে রাজশাহী নগরীর উচু-নিচু সব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর উপশহর এলাকার রাস্তা-ঘাটে বৃষ্টির পানি থৈ থৈ করছে। নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়সহ এর আশপাশের রাস্তায় হাটু পানি। বিশেষ করে নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার রাস্তা-ঘাট ও বাসাবাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। নগরীর বর্ণালীর মোড় থেকে যাদুঘর মোড় পর্যন্ত রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমায় এই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টি পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে নিচতলার বাসা বাড়িতে লোকজন থাকতে পারছেন না। যাদের এক তলা বাসা তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। সবজিপাড়া, মেথরপাড়াসহ এর আশপাশে প্রতিটি বাড়িতেই হাটু পানি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রাস্তার ধারের দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাত থেকেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নির্ঘুম রাত পার করেছেন এই এলাকার লোকজন। নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার লোকজন যানবাহন ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন নৌকা।

দেখা গেছে, সকাল থেকে হেতেমখাঁ এলাকার লোকজন বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করছেন। নৌকায় তুলে রাখা হয়েছে বাসা বাড়ির মালপত্র। বাড়ির লোকজনও নৌকায় সময় পার করছেন। এছাড়াও রান্নার কোনো ব্যবস্থা না থাকবায় অনেক পরিবারের সকাল দুপুরের খাবার জোটেনি। এম,ন কি রান্নার কোনো ব্যবস্থাও করতে পারেনি। বাইরে থেকে নৌকা যোগে গিয়ে খাবার কিনে খাচ্ছেন এই এলাকার লোকজন।

এদিকে, নগরীর নিচু এলাকা নামে পরিচিত নগরীর বহরমপুর এলাকা। বৃষ্টি শুরুর পর থেকে এই এলাকার রাস্তা-ঘাট ঢুবে যায়। এই এলাকার প্রতিটি রাস্তায় গত রাত থেকেই হাটু পানি জমে আছে। অনেকের বাসা বাড়িতে এখন পর্যন্ত কোমর পর্যন্ত পানি জমে আছে। উপায় না পেয়ে অনেক পরিবার শ্যালো মেশিন ও মোটার দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন। তারপরও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। কারণ সকালের দিকে কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টি থামলেও আবার বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থেকে। এতে বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়া পানি কমছে না।

রাস্তা ও বাসা বাড়িতে জলাবদ্ধতার কারণ হিসাবে লোকজন বলছেন, এবার ভরা মওসুমেও খুব বেশি বৃষ্টি হয়নি। এর কারণে পানি নিষ্কাশনের জন্য নগরীতে যে ড্রেন রয়েছে তা পরিস্কার না করায় ভরাট হয়ে আছে। ড্রেন ভরাট হয়ে থাকার কারণে নিচু উচু সব এলাকাতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ ড্রেন ভরাট হয়ে থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি উপচে উঠে আসছে রাস্তায়। সেই পানি ঢুকে পড়ছে বাসা বাড়িতেও। বৃষ্টিúাতের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন থেকে এসব ড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি। পরিষ্কার না করার জন্য ড্রেন দিয়ে পানি অপসরণ হচ্ছে না। নগরীর অনেক ড্রেন ভরাট হয়ে রাস্তা সমপরিমান ময়লা জমে আছে। ময়লা জমে থাকা এলাকায় এলাকায় বেশি জলাবদ্ধাতা সৃষ্টি হয়েছে।

নগরীর ব্যস্ততম রাস্তা সাহেব বাজার, লক্ষ্মীপুর, উপশহর, বর্ণালীর মোড় হতে হেতেমখাঁ হয়ে যাদুঘরের মোড় পর্যন্ত এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রতিটি ড্রেন ভরাট হয়ে আছে। যার কারণে জিরোপয়েন্ট বা লক্ষ্মীপুর অথবা উপশহরের মত এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে ড্রেনের পানি উপচে উঠে যাচ্ছে রাস্তায়। আর এই পানি নিষ্কাশন হতে সময় লাগছে। কখনো কখনো কখনো বৃষ্টির পর পুরো দিন চলে গেলেও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। কারণ একটাই সেটা হলে ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে।

এছাড়াও ফুটপাতের দোকানদাররা ব্যবসা কওে রাতে বাড়ি যাওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়। ভারি বর্ষণের কারণে ফুটপাতের দোকাপাট ডুবে মালপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকানদারদেরই মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে আজ বৃস্পতিবার কর্মজীবিদেও শেষ অফিস ছিল। রাস্তা ডুবে থাকার কারণে অফিস আদালতে যেতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমন কি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *